নারীর জয় হোক
সর্বত্র

March 12, 2018

কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে। অরণি সেটাই করেছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে মেয়েদের জন্য এ পেশায় আসার পথ সুগম হলো।

গলফের মাঠে গলফার দম্পতি অরণি ও সিদ্দিকুর রহমান। অরণির ভালো নাম সামাউন আঞ্জুম। এ বছরের ২৭শে জানুয়ারি বিকেলে স্বামী সিদ্দিকুর রহমানের ত্রিপক্ষীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ঢাকা ওপেন দেখার জন্য তিনিও মাঠে এসেছিলেন। সিদ্দিকুরের ট্রফি জয়ের কারণে সেদিন অরণি যখন আনন্দে ভাসছেন তখনই মাইকে ঘোষণা হলো আরেকটি সুখবর। সেটি হলো, বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার নারী গলফারের খেতাব পাচ্ছেন অরণি।

গলফ ফেডারেশনের প্রাথমিক বাছাইয়ে অরণি ছিলেন অ্যামেচার গলফার। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু একে পেশা হিসেবে কেউ বেছে নেয়নি। বাংলাদেশ প্রফেশনাল গলফারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএ) থেকে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে অরণির হাতে তুলে দেওয়া হলো ‘প্রো-কার্ড’। আসলে নানা সামাজিক বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য পেশাদার গলফ খেলা এখনও বেশ চ্যালেঞ্জের। কিন্তু তারপরও কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে। অরণি সেটাই করেছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে মেয়েদের জন্য এ পেশায় আসার পথ সুগম হলো।

অরণির সফল পেশাদার জীবন হলো একজন নারীর এগিয়ে যাওয়ার সাফল্যের গল্প। সাফল্য যে নারীর জীবনেই আসুক-না কেন, তার খবর জানলে একজন নারী হিসেবে আমি বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ায়ে ভেসে যাই। ক্রিকেট, ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। তারা নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। সাফল্যের হাতে হাত মিলিয়ে গলফের জগতে নতুনভাবে যুক্ত হলেন অরণি।

জেন্ডারসাম্য অর্জন এবং নারী ও কন্যাশিশুর ক্ষমতায়নে ব্র্যাক কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি কিশোর ও তরুণ বয়সিদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ প্রদান করে কিশোরকিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের ৫০০০টি কিশোরকিশোরী ক্লাবের দেড় লক্ষেরও বেশি সদস্য জীবনদক্ষতা, জীবিকা ও কর্মদক্ষতার প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোকিত জীবনের পথে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের অনুরূপ মডেলে উগান্ডা, তানজানিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিয়েরালিওনেও একই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই ক্লাবের সদস্যরা একটি নিরাপদ পরিবেশে সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব বিকাশ ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে। সুস্থ মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে ক্লাবে তাদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করা হয়। সে হিসেবে বলতে গেলে সবাই খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত। ক্লাবের পক্ষ থেকে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, কারাতে, আত্মরক্ষা এবং সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরী ক্লাবে যোগ দেওয়া খাগড়াছড়ির চিং এখন মাঠ দাপিয়ে ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছে। সে পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হবার স্বপ্ন দেখে। কিশোরী ক্লাবের আরেক সদস্য নেত্রকোনার সীমা সাঁতার শেখানোর মতো জীবনরক্ষাকারী দক্ষতা শেখাতে মনোনিবেশ করেছে। শেরপুরের নিগার সুলতানা জ্যোতি, জয়পুরহাটের সুরাইয়া আজমিন ছন্দা জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের তালিকাভুক্ত খেলোয়াড়। যশোরের খাদিজা আক্তার জাতীয় দলে ফুটবল খেলে। যশোরের রিতা বিশ্বাস পূজা আগামী ১৯শে মার্চ ২০১৮ পাকিস্তানে এক কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেÑএরা সবাই ব্র্যাক কিশোরকিশোরী ক্লাবের সদস্য।

কিশোরকিশোরীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের পথকেই সুগম করতে এগিয়ে এসেছে কিশোরকিশোরী ক্লাব। গ্রাম পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসার যে প্ল্যাটফর্ম, তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে এই ক্লাব। খেলাধুলার পাশাপাশি তারা আত্মবিশ্বাসীও হয়ে উঠেছে। শহরের তো বটেই গ্রামের তরুণীরাও শক্ত হাতে ক্রিকেটের ব্যাট ধরা বা ফুটবলে কিক মারতে মারতে শিখে নিচ্ছে জীবনসংগ্রামে কীভাবে শক্ত হাতে হাল ধরতে হয়।

বর্তমান সময়ে নারীপুরুষ সবক্ষেত্রেই সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। পেশাদার খেলার জগতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এগিয়ে আসুক। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও তাদের প্রতিভা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করুক। নারীর জয় হোক সর্বত্র।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments