ঢাকায় থাকেন, মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছেন, টাকা-পয়সা রোজগার করছেন- এই খবর পেয়ে স্বামী আবার ফিরে আসে হামিদার জীবনে। তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে এবং এক সময় তাদের সম্পর্ক ভালো হলে,স্বামীও ঢাকায় চাকরি নেন। গত মার্চ মাসে মহামারির কারণে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে হামিদা আর তার স্বামী বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে চলে আসার পর আবারও তার কাছে স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ির টাকা চাওয়া শুরু হয় ।
আমি ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির একজন কর্মী। কর্মস্থল নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলা। মানুষের অধিকার রক্ষায় মহামারির দিনেও থেমে নেই আমাদের কর্মসূচির কার্যক্রম।
দুর্গাপুরের কেরনখলা গ্রামের ভূমিহীন কৃষক মো.ওলিউল্লাহর মেয়ে হামিদা খাতুন। ২০১৫ সালের ১লা আগস্ট একই উপজেলার মো.ওমর ফারুকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবি করে আসছে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। কোনোরকমে সহ্য করে টিকে থাকা সংসারে আসে আরও বড়ো ঝড়। তখন হামিদা তিন মাসের গর্ভবতী, যৌতুকের জন্য তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
হামিদা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই তার মেয়ের জন্ম হয়। স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ-খবরও নিতে আসে না স্বামী। তাই শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যাবার আশা ত্যাগ করেন হামিদা। তিনি ঢাকায় এসে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। সেই আয়ে মা-মেয়ের ভালোই চলছিল। সংসারে খরচ থেকে কিছু টাকা জমিয়ে বাবার বাড়িতে একটি জমি বন্ধক রাখেন।
ঢাকায় থাকেন, মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছেন, টাকা-পয়সা রোজগার করছেন- এই খবর পেয়ে স্বামী আবার ফিরে আসে হামিদার জীবনে। তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে এবং এক সময় তাদের সম্পর্ক ভালো হলে,স্বামীও ঢাকায় চাকরি নেন। কিন্তু গত মার্চ মাসে মহামারির কারণে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে হামিদা আর তার স্বামী বাড়িতে ফিরে যান।
গ্রামের বাড়িতে চলে আসার পর আবারও তার কাছে স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ির টাকা চাওয়া শুরু হয়। তারা বেতনের সব টাকা দাবি করে। হামিদা সেই দাবি মেটানোর পরও তাকে আরও টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এমনকি টাকা না দিলে মেরে ফেলার ভয়ও দেখায়।
প্রতিদিনই স্বামী তাকে কোনো-না কোনো কারণে নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে গত ৩১শে মার্চ হামিদার কাছে তার স্বামী বাবার বাড়ির সেই জমির টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করলে হামিদা তা দিতে অস্বীকার করেন। তখন তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবেশীর সহায়তায় প্রাণে রক্ষা পেলেও, মেয়েকে রেখে স্বামী তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
সেদিনই ব্র্যাক অফিসে এসে হামিদা তার স্বামী মো.ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সন্তানকে নিজের কাছে নিয়ে আসার জন্য সাহায্য চায়। আমি নিজেই তার সাথে কথা বলি। কিন্তু সাধারণ ছুটি থাকায় অফিসে কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছিল। এরপরও আইনি সহায়তার জন্য তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
থানায় গিয়ে হামিদা সন্তান উদ্ধারের অভিযোগ দায়ের করতে চান। অনেক কথাবার্তার পর উক্ত থানার ওসির সহায়তায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তিনি দ্রুত সন্তান উদ্ধারের নির্দেশ দিলে সঙ্গে সঙ্গে থানার এসআই খালিসাপাড় গ্রামে অভিযান চালিয়ে হামিদার কন্যাকে উদ্ধার করেন। বর্তমানে হামিদা তার মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে নিরাপদে রয়েছেন।
এত দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তার সন্তান উদ্ধার করে দেবার জন্য হামিদা ব্র্যাক এবং মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির কাছে বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন। বৈষম্যহীন একটি পৃথিবী গড়তে যে প্রতিষ্ঠান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সেই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী হিসেবে মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়া আমার প্রধান দায়িত্ব বলেই আমি মনে করি।
সম্পাদনা- সুহৃদ স্বাগত, তাজনীন সুলতানা