মহামারি প্রতিরোধে সিএসটি ঢাকা

October 24, 2021

১৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মী (কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার) এবং ১৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবক এই সিএসটি ঢাকা কার্যক্রমে নিযুক্ত ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় খানা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ, মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক বিতরণ ও সচেতনতা বার্তা প্রচার করে তারা জনসাধারণের পাশেই ছিলেন সবসময়। এছাড়াও ৯১০ জনের টিকা রেজিস্ট্রেশনে সহযোগিতা, ৩২,০৩৩ জনের লক্ষণ শনাক্ত এবং ৪,০৬৭ জন সম্ভাব্য করোনা রোগীকে টেলিমেডিসিন সহায়তা দিয়েছে সিএসটি ঢাকা-এর সাথে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা।

“করোনাভাইরাস মহামারিতে চাই সচেতনতা এবং সকলের সহযোগিতা। তাহলেই সফল হবে আমাদের কার্যক্রম।”

এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ মহামারির আরেকটি নতুন ঢেউয়ের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। এর ফলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বিশেষভাবে ঢাকা শহরে এর প্রভাব দেখা যায়। রাজধানীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহতা প্রতিরোধ করতে ব্র্যাক হাতে নেয় সিএসটি ঢাকা প্রকল্প, যা ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)-এর সহযোগিতায় এবং UNFPA ও FAO-এর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হয়।

এই প্রকল্পের আওতায় ছিল ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৮টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডের ১৩৬০টি জনসমাবেশ স্থল (যেমন-কাঁচাবাজার, উপাসনালয়, রেস্তোরাঁ, গণপরিবহণ, স্টেশন ইত্যাদি)। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এসব স্থানে স্বেচ্ছাসেবকেরা সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালান এবং ব্র্যাকের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় খানা পরিদর্শন ও সেবা প্রদান করেন। এছাড়া সঠিকভাবে হাত ধোয়ার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে স্থাপন করা হয় ৪০৮টি হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন। প্রকল্প শেষে এসব স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিচ্ছেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ (চেঞ্জ এজেন্ট)।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ফল বিক্রেতা মোবারক বলেন, “এখানে বাজারের মধ্যে হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন পেয়ে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে, অনেকেই সঙ্গে করে স্যানিটাইজার নিয়ে আসেন না। এখানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকায় সবাই তা ব্যবহার করতে পারছে।”

১৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মী (কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার) এবং ১৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবক এই সিএসটি ঢাকা কার্যক্রমে নিযুক্ত ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় খানা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ, মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক বিতরণ ও সচেতনতা বার্তা প্রচার করে তারা জনসাধারণের পাশেই ছিলেন সবসময়। এছাড়াও ৯১০ জনের টিকা রেজিস্ট্রেশনে সহযোগিতা, ৩২,০৩৩ জনের লক্ষণ শনাক্ত এবং ৪,০৬৭ জন সম্ভাব্য করোনা রোগীকে টেলিমেডিসিন সহায়তা দিয়েছে সিএসটি ঢাকা-এর সাথে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা।

কমিউনিটি কেন্দ্রিক এই প্রকল্পটি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করে। প্রকল্প চলাকালীন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, বাজার কমিটির নেতাদের সাথে ৫১টি ফলপ্রসূ মিটিং করা হয়। একই সাথে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশিপের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৩৪০০ মসজিদ এবং ১২টি চার্চের স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের। এবং সেখানে পৌঁছে দেওয়া হয় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান এবং তথ্যপূর্ণ লিফলেট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকা রেজিস্ট্রেশনসহ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রচারে সহযোগিতা করেছেন ইসলামিক বক্তা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব গাজী সানাউল্লাহ রাহমানি এবং বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশিপের সাধারণ সম্পাদক লিওর সরকার।

এ বছর কোরবানির ঈদকে লক্ষ্য করে সিএসটি ঢাকা-এর কিছু কার্যক্রম রাখা হয়েছিল ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম গবাদি পশুর হাটগুলোতে। স্বেচ্ছাসেবকগণ হাটে আগত ক্রেতা, বিক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের জন্য মাস্ক ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেন। এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারিতে চাই সচেতনতা এবং সকলের সহযোগিতা। তবেই আমাদের কার্যক্রম সফল হবে।”

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত মাসে পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ। সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। সিএসটি ঢাকা প্রকল্পের অধীনে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করে এবং সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান করে। বিশেষত স্কুলগামী শিক্ষাথীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রঙিন দেয়ালচিত্র, কমিক্স এবং সিসিমপুর চরিত্রদের নিয়ে করা একটি করোনাভাইরাস বিষয়ক শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।

রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা সিএসটি ঢাকা কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “সিএসটি ঢাকা প্রকল্পটি যদি আগামীতে আরও কিছুদিন চালিয়ে নেওয়া যায়, তবে সামনের দিনগুলোতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।”

 

সম্পাদনা- তাজনীন সুলতানা

2.9 13 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments