এভাবেও জয়ী
হওয়া যায়!

August 7, 2019

কোনো সহায়-সম্বল না থাকার পরও অসীম ধৈর্য্য, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে তিনি দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। অনামিকা বলেন, ‘আর্থিক স্বাধীনতা এবং স্বাবলম্বনের জন্য দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।’

‘শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী’ ক্যাটাগরিতে ব্র্যাককর্মী অনামিকা ঠাকুর শিল্পী ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অনামিকার হাতে একটি সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন।

অনামিকা ঠাকুর শিল্পীর বেড়ে ওঠার গল্প পাঠকদের কৌতূহল নিবারণের জন্য একটু বলা প্রয়োজন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মাল্লাপাড়া গ্রামেই তার বেড়ে ওঠা। বেড়ে ওঠার সময়টাতে দারিদ্র্য ছিল তাদর পরিবারের নিত্যসঙ্গী। বড়ো কঠিন ছিল সে সময়গুলো। বাবা ছিলেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তিনি কাজকর্ম খুব বেশি করতে পারতেন না। সুতরাং পরিবারের আয়-উপার্জনের জন্য মা-ই একমাত্র ভরসা। অর্ধাহার ছিল, ছিল অনাহারও। এমনও দিন গেছে যেদিন পাশের বাড়ি থেকে আনা ভাতের মাড় ছাড়া পুরো পরিবারের পেটে আর কিছুই পড়েনি!

‘খাই আর না খাই, কখনও স্কুলে যাইনি এমনটি হয়নি। ক্ষুধা পেটে অথবা আধাপেট খেয়েও সময়মতো হাজির হয়েছি স্কুলে। বই কেনার জন্য অনেক কষ্ট করতে হতো। ছোটোবেলা থেকেই লেখাপড়ার খরচ মেটানোর জন্য টিউশনি করেছি।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে কষ্টে গলা ধরে আসছিল অনামিকার। এভাবেই ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা। এভাবেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো।

সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও অনামিকা সবসময় চাইতেন নিজেকে যোগ্য করে তুলতে। নিজের দক্ষতাকে আরও বাড়িয়ে নিতে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং আনসার ভিডিপি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। শিখেছেন সেলাই ও সংগীত। নিজে শিখে অন্যদেরকেও শিখিয়েছেন। টাকা আয় করে পরিবারকে দিয়েছেন। এভাবেই কোনো সহায়-সম্বল না থাকার পরও অসীম ধৈর্য্য, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে তিনি দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। অনামিকা বলেন, ‘আর্থিক স্বাধীনতা এবং স্বাবলম্বনের জন্য দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।’

সবসময়ই পরিবারে টাকাপয়সার টানাটানি ছিল, কিন্তু তারপরও তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দেননি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম ডিগ্রি লাভ করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালিত রাজশাহী শিশু নিকেতন ইউনিটে পিও হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সংগীত শিক্ষক হিসেবেও চাকরি করেছেন। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুশরিভুজায় ব্র্যাকের শাখা হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টায় দারিদ্র্যকে জয় করে পুঁথিগত জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও সামাজিক আচরণের শিক্ষাও নিয়েছেন। তিনি শুধু নিজেই শিক্ষিত হননি, পিছিয়ে পড়া নারীদের লেখাপড়া শিখতে অনুপ্রাণিত ও সহায়তা করেছেন। বলা যায়, একজন নারী হিসেবে শিক্ষার প্রসারে তিনিও রাখছেন অসামান্য অবদান।

ছবিঃ www.ntvbd.com

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments