সুচিত্রার কাজটা ভীষণ পরিশ্রমের, জমি চাষ থেকে শুরু করে সবই তো করছেন। নিজ চোখে আমরা যা দেখেছি অর্থাৎ ফসলের খেতের পানি পেরিয়ে ১৫-২০ কেজি ধান মাথায় বয়ে নেওয়ার কাজটা করতে পুরুষদেরও কষ্ট হয় আর সুচিত্রা তা করছেন হাসিমুখে।
সুচিত্রা রানি মণ্ডল। তার সঙ্গে আমাদের ফসলের মাঠে দেখা। কেজি কেজি ধানের গোছা মাথায় নিয়ে দিব্যি হেঁটে চলেছেন। এত ভারী বোঝা নিয়ে চলছেন কিন্তু চেহারায় তার প্রকাশ নেই। খুশি মনে কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অবলীলায়। নিজের খেতে যখন ভালো ফসল হয় তখন সেই আনন্দ আসলে সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার এক গ্রামে সুচিত্রা থাকেন স্বামী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে। স্বামী দিনমজুরের কাজ করে। একার আয়ে সংসার চলে না তাই সুচিত্রাও তার সাথে ফসলের মাঠে কাজ করতে শুরু করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এখন অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করেন।
সুচিত্রার কাজটা ভীষণ পরিশ্রমের, জমি চাষ থেকে শুরু করে সবই তো করছেন। নিজ চোখে আমরা যা দেখেছি অর্থাৎ ফসলের খেতের পানি পেরিয়ে ১৫-২০ কেজি ধান মাথায় বয়ে নেওয়ার কাজটা করতে পুরুষদেরও কষ্ট হয় আর সুচিত্রা তা করছেন হাসিমুখে। কেন জানেন, কারণ এবারের ফলন তার আশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সারা বছরের খোরাক নিয়ে এখন আর তাকে ভাবতে হবে না। পরিশ্রম তো সে আগেও করতেন, এবারও করেছেন। কিন্তু কোনোবারই এবারের মতো ফলন পাননি।
সাতক্ষীরা অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত। তাই সাধারণ জমিতে আমরা যেমন সহজে চাষ করতে পারি সেখানে তা হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগে যেসব জমিতে চাষ করা যেত এখন সেসব অনেক জমিতে আর চাষ করা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ জমিতে সাধারণ নিয়মে ফসল বা সবজির চাষ করলে ফলন হয় না বললেই চলে। জমিতে ফসল না হলে অভাব মিটবে কী করে?
সুচিত্রা যখন নানা কারণে কিছুতেই ভালো ফলন পাচ্ছিলেন না তখন অন্যদের কাছ থেকে শুনে একদিন চলে যান ব্র্যাকের এডাপটেশন ক্লিনিকে। সেখানকার কর্মীদের গিয়ে বলেন জমিতে চাষ করতে তার কী কী সমস্যা হচ্ছে। এডাপটেশন ক্লিনিকের কর্মীরা তার কথা মন দিয়ে শোনেন। তারপর তাকে নিয়ে জমি দেখতে যান। জমির মাটি পরীক্ষা করে তারা তাকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন – কীভাবে বীজতলা করবেন, কোন্ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করবেন, কী পরিমাণ সার দেবেন, কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করবেন ইত্যাদি।
সেইসঙ্গে কর্মীরা তাকে লবণসহিষ্ণু আমন ধানের বীজ দেন। সেই ধানের বীজ তিনি বর্গা নেওয়া জমিতে রোপণ করেন এবং তাদের পরামর্শ মতো যত্ন নেন। এবার তার জমিতে ভালো ফসল হয়েছে। নিজ হাতে বোনা ধানে ভরে উঠেছে জমি।
ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির একটি নতুন এবং উদ্ভাবনী প্রকল্প হলো ব্র্যাক এডাপটেশন ক্লিনিক। ২০২২ সাল থেকে এই ক্লিনিকগুলো কাজ শুরু করছে। ব্র্যাকের ১০টি এডাপটেশন ক্লিনিক কাজ করছে সাতক্ষীরা, জামালপুর, যশোর, পটুয়াখালী এবং নওগাঁ জেলায়। এসব অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের সমস্যা সমাধানে বিনামূল্যে পরামর্শ পাচ্ছেন। মূলত যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের চাষাবাদ করতে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেসব এলাকায় কোনো জমি যেন কোনো ঋতুতেই অনাবাদি না থাকে, সেজন্য এই ক্লিনিকগুলো সবরকম কৃষি সহায়তা দিয়ে থাকে।
সুচিত্রা বলেন, “আগে যেমনে জমিতে কাজ করতাম, তাতে ফলন ভালা হইতো না। ওহন কৃষি ডাক্তারের কথামতো করায় ভালো ফল পাইছি।”
সুচিত্রার সাফল্যের প্রধান কারণ হলো তিনি সমস্যা থেকে বের হবার উপায় অর্থাৎ লবণাক্ত জমিতে কীভাবে ভালো ফসল ফলানো যায় তা জানতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি এখন সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পেয়েছেন। আর সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে সুচিত্রার ভালো থাকার চেষ্টা।
একটি বাস্তব ধর্মী উদ্যোগ। স্কুল পর্যায়ে প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।
Wonderful news. thanks for sharing.
Great story!