আমাদের ঘরবাড়ি, জীবাণুমুক্ত রাখতে পারি

March 23, 2020

সকল জীবাণুনাশক সামগ্রী সবধরনের জীবাণুর বিরুদ্ধে একইরকমভাবে কাজ করে না। কেনার আগে দেখুন জীবাণুনাশকটি কী ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস মেরে ফেলতে সক্ষম। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (সিডিসি)-র মতে বাড়িতে খুব সহজেই শক্তিশালী জীবাণুনাশক তৈরি করা যায়।

এখন এই দুর্যোগের কালে, নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর মহামারি থেকে সুরক্ষার জন্য ঘরের সাধারণ জিনিসগুলো যেমন ফসেটের হ্যান্ডেল, ফোন, রিমোট কন্ট্রোল- এগুলো জীবাণুমুক্ত রাখার বিষয়টি আপনার মাথায় আছে তো? না থাকলে এই মুহূর্ত থেকে শুরু করুন। ঘরবাড়ি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা তো নতুন কিছু নয়। নিয়মিত টয়লেট পরিষ্কার করা বা মাছ-মাংসের বাজার আনার পর রান্নাঘর পরিষ্কার করার মাধ্যমে আপনি তা সবসময়ই করতেন।

এখন থেকে একটু বেশিই সচেতন হতে হবে, মেনে চলতে হবে।

জীবাণুনাশক আছে নানা প্রকারের

বাজারে কত ধরনের জীবাণুনাশকই তো কিনতে পাওয়া যায়। তবে একটি কথা মনে রাখবেন, সকল জীবাণুনাশক সামগ্রী সবধরনের জীবাণুর বিরুদ্ধে কিন্তু একইরকমভাবে কাজ করে না। এমন অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস রয়েছে যাদের ধ্বংস করা সাধারণ জীবাণুনাশকের কাজ নয়!

জীবাণুনাশক ব্যবহারের আগে দেখে নিন

জীবাণুনাশক পণ্যটি ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে লেবেল পড়ে নিন। সেই সঙ্গে আরও দেখুন জীবাণুনাশকটি কী ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস মেরে ফেলতে সক্ষম।

বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন জীবাণুনাশক

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (সিডিসি)-র মতে খুব সহজেই শক্তিশালী জীবাণুনাশক তৈরি করা যায়। এক গ্যালন পানিতে ১/৩ কাপ সাধারণ ব্লিচিং পাউডার (সোডিয়াম হাইপোক্লোরাউড) মিশিয়ে জীবাণুনাশক ঘরেই তৈরি করা যায়। যদি কম পরিমাণে মিশ্রণ তৈরি করতে চান তাহলে ৪ চা-চামচ ব্লিচিং পাউডার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে নিন।

কীভাবে ব্যবহার করবেন?

হাতে গ্লাভস পরে ফেলুন। তারপর একটি পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে মেঝে বা যে স্থান জীবাণুমুক্ত করতে চাচ্ছেন তা মুছে নিন। এরপর ৫ মিনিট বাতাসে শুকিয়ে নিন। খাদ্যদ্রব্য যেসব পাত্রে রাখা হয় সেগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এবং বাতাসে শুকিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন ব্লিচের মিশ্রণটি যেন আপনার কাপড় বা চোখে ছিটে না আসে। স্টেনলেস স্টিলের কোনো জিনিস যেমন সিঙ্ক জীবাণুমুক্ত করতে অল্প পরিমাণে জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।

ফটো ক্রেডিট: প্রথম আলো

ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে আমরা কী করতে পারি

  • প্রতিদিন তো ঘর মুছবেনই। এসময় জীবাণুনাশক দ্রবণ ব্যবহার করতে পারেন। সেইসঙ্গে ঘর অপরিষ্কার থাকলে ডিটারজেন্ট দিয়ে আগে পরিষ্কার করুন।
  • পরিষ্কার করা এবং জীবাণুমুক্ত করা কিন্তু একই বিষয় নয়। ৩০-৬০ সেকেন্ডে কোনো জিনিস পরিষ্কার করা যায় কিন্তু জীবাণুমুক্ত করতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
  • সাধারণ সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে জীবাণুর সংখ্যা অনেকাংশে কমে যায়। ফলে আক্রান্ত হবার আশঙ্কাও কমে যায়। কিন্তু যদি জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করতে হয় তাহলে সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কারের পাশাপাশি জীবাণুনাশক পণ্য ব্যবহার করুন।
  • কখনও জীবাণুনাশক এবং পরিষ্কার করার সামগ্রী একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলবেন না। যদি জীবাণুনাশকের গন্ধ ভালো না লাগে তাহলে ঘরের জানালা খুলে দিন।
  • নরম বস্তু যেমন বালিশ বা তুলা দিয়ে তৈরি এমন খেলনা জীবাণুমুক্ত রাখতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল স্প্রে ব্যবহার করুন।
  • কোনো জীবাণুনাশক যেমন ইথানলযুক্ত অ্যালকোহল, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ইত্যাদি কোনো জায়গায় ব্যবহার করার আগে এটি ক্ষতিকর কি না তা দেখার জন্য এককোনায় অল্প করে লাগান। খাদ্যদ্রব্য রাখা হয় এমন পাত্রকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

তৈজসপত্র কীভাবে পরিস্কার রাখবেন

  • খাবারের জন্য আমরা যেসব তৈজসপত্র ব্যবহার করে থাকি যেমন: হাঁড়িপাতিল, থালাবাসন- এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের আগে ও পরে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। আমরা অনেক সময় এঁটো থালাবাসন রেখে দিই। ফলে এসবে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। তাই সাবান দিয়ে পরিষ্কার করার পরও এসব থালাবাসন আবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়াও থালাবাসন মাজার মাজুনি, হাঁড়িপাতিল ধরার কাপড় এগুলো নিয়মিত পরিস্কার, শুকনো এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। দা, বঁটি, ছুড়ি, চাকু, কাটিং বোর্ড- এই জিনিসগুলোতে জীবাণু থাকতে পারে। তাই প্রতিবার কাটাকুটির পর এসব জিনিস ভালো করে সাবান দিয়ে ঘষে ধুয়ে রাখুন।

ভিনেগার কি জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়?

  • না। ভিনেগার বা ভিনেগারযুক্ত অন্যান্য পরিষ্কারক দ্রব্য আমাদের গৃহস্থালী জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। বেশিরভাগ ব্যকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে এটি কার্যকর নয়, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে তো নয়ই। তবে এটি কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে।

কাপড় ধোয়ার সময় যা করতে পারি

  • অসুস্থ রোগীর কাপড় ধোয়ার সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন এবং ব্যবহারের পর গ্লাভসগুলো বিনে ফেলে দিন। যদি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য গ্লাভস পরে কাপড় ধুয়ে থাকেন, তাহলে কোভিড-১৯ ধ্বংস হয় এমন জীবাণুনাশক দিয়ে তা জীবাণুমুক্ত করুন। ঘরের অন্য কোনো কাজে এই গ্লাভস ব্যবহার করবেন না। গ্লাভস খুলে ফেলার পর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
  • যদি গ্লাভস ব্যবহার না করেন তাহলে অবশ্যই ময়লা কাপড় ধরার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  • ময়লা পোশাক বেশি ঝাড়বেন না, কারণ এতে বাতাসে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
  • সাবান-পানি দিয়ে কাপড় ধোয়ার পর ভালো করে রোদে শুকাতে দিন।

আরও যেসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে

  • আক্রান্ত রোগীর জন্য আলাদা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করুন। তিনি যেসব গ্লাস, প্লেট ব্যবহার করবেন সেগুলো অন্যরা ধরার সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন। রোগীর থালাবাসন ধোয়ার জন্য গরম পানি ব্যবহার করুন।
  • রোগীর জন্য আলাদা ময়লা ফেলার বিন ব্যবহার করুন এবং তা পরিষ্কারের সময় অবশ্যই গ্লাভস ব্যবহার করুন। ময়লা বাইরে ফেলে আসার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

পরিচ্ছন্নতাই আমাদের রাখতে পারে নিরাপদ। তাই জীবাণুমুক্ত রাখি নিজেদের ঘরবাড়ি, অন্যদেরও উৎসাহিত করি।

তথ্যসূত্র: https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/prepare/cleaning-disinfection.html

4.5 4 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments