লকডাউন পরিস্থিতিতে যখন ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছিল না, তখন তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সমাজ সেবামূলক কাজ চালিয়ে গেছেন। আবার বাজারে যখন মাস্কের অভাব, তিনি বসে পড়েছেন সেলাই মেশিন নিয়ে। নিজের হাতে প্রায় ১০০টি ফেইস মাস্ক তৈরি করে কমিউনিটিতে বিতরণ করেছেন।
মোছাঃ রাবেয়া খাতুন। বয়স ৩৪ বছর। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে প্রোগ্রাম অর্গানাইজার (পিও) হিসেবে ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচিতে কর্মরত। ব্র্যাকে আছেন প্রায় ১০ বছর হলো। ইতিমধ্যে একজন সৎ, সাহসী ও নির্ভীক কর্মী হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন।
দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যনীতি অনুসরণ করে নিজেকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি কমিউনিটিতে গিয়ে গিয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ত্রাণ ও সহায়তা পেতে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগণ এবং পল্লীসমাজের সদস্যেদের পাশে আছেন রাবেয়া।
লকডাউন পরিস্থিতিতে যখন ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছিল না, তখন তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সমাজ সেবামূলক কাজ চালিয়ে গেছেন। আবার বাজারে যখন মাস্কের অভাব, তিনি বসে পড়েছেন সেলাই মেশিন নিয়ে। নিজের হাতে প্রায় ১০০টি ফেইস মাস্ক তৈরি করে কমিউনিটিতে বিতরণ করেছেন।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন ও আচরণ পরিবর্তনের নতুন স্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানতে নিয়মিত তিনি বিভিন্ন ছবি, তথ্য সংগ্রহ করছেন। মানুষের জন্য কিছু করা বা করার জন্য চেষ্টার জন্যই তিনি অনেকের মনে ভরসার জায়গা করে নিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারিতে কাজের পরিবেশ ও তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাবেয়া খাতুন বলেন–
‘‘করোনাভাইরাস যখন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে বিশেষ করে কমিউনিটিতে- ঠিক তখন থেকেই মানুষকে সচেতন করার কাজে লেগে পড়েছি। কিন্তু শুরুর দিকে অনেক ভয়ে ছিলাম। এমন একটি ছোঁয়াচে রোগের মধ্যে কীভাবে কাজ করব বুঝতে পারছিলাম না। অন্যান্য দেশে দেখতাম বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। বাড়ি থেকে প্রতিদিন ফোন আসত, বলে বাড়ি চলে যেতে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু প্রোগ্রাম ও ব্র্যাক থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে মোটিভেশন দেয়া হতো।
সাধারণ মানুষ সচেতন নয়, খাবার নেই, ঘরে আটকে আছে। করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। তাই ভাবলাম যেহেতেু আমি কউিনিটি ওয়ার্কার, কমিউনিটির প্রতি আমার অনেক কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা আছে। সমাজের মানুষের জন্যে আমাদের কাজ করতে হবে। তাই ব্র্যাকের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষানীতি মেনে প্রতিদিন মাঠে কাজ করে চলেছি। পল্লীসমাজ, সম্প্রীতি ফোরাম, জনপ্রতিনিধিদেরকে সচেতন করছি এবং তাদেরকে ও কমিউনিটিকে সচেতনকরতে উদ্বুদ্ধ করছি। তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করছি।
শুরুতে ভয় লাগলেও মানুষের জন্যে কাজ করতে পারছি, নিজের একটা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি ও কাজে লাগাতে পারছি বলে ভাবতে বেশ ভালো লাগছে। এখন অনেকেই এই কাজে আমাকে সহায়তা করছে। যেমন- পল্লীসমাজ, সম্প্রীতি ফোরাম, ইউপি ও পৌর কাউন্সিলরগণ। ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি থেকে উদ্যোগ নিয়ে পল্লীসমাজ ও সম্প্রীতি ফোরামের মাধ্যমে প্রায় ৩০০টি মাস্ক বিতরণ করেছি এবং ৫০০ লিফলেট বিলি করেছি। এলাকার মানুষ যাতে হাত ধুতে পারে এজন্যে হাত ধোয়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ করছি। হাঁচি, কাশি বা জ্বর থাকলে আলাদা ঘরে একলা থাকতে এবং শরীর বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সরকারি ও ব্র্যাকের জরুরি নম্বরসমূহে কল দিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি। মানুষ এখন বেশ সচেতন। সামনের দিনগুলিতে আমি এভাবেই সমাজের জন্য কাজ করে যেতে চাই।’’
সবাই যার যার জায়গায় কাজ করতে পারলে এবং সবাই সচেতন হলেই করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে রাবেয়া খাতুনের বিশ্বাস। গুজব ও আতঙ্ক না ছড়িয়ে সাহস ও প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে পারলেই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি আরও মজবুত ও দৃঢ় হবে- বাংলাদেশ করোনাকে জয় করে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে, পৃথিবী তার আপন রূপ ফিরে পাবে – সেই স্বপ্ন নিয়েই যেন প্রতিদিন এক সাহসী যোদ্ধার মতো কাজ করে যাচ্ছেন রাবেয়া।
সম্পাদনা- সুহৃদ স্বাগত, তাজনীন সুলতানা
অসাধারণ
A great piece of work, nicely written and very inspirational story telling. I am feeling proud because I know her personally from our project and also I am involved with the context writing.
Thanks BRAC- for the acknowledgement.
Very nice story.
Salute for this kind of working.