জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, তাপদাহ, দাবানলের মতো দুর্যোগে পৃথিবীর প্রতি প্রান্তই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আর, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ। শিল্পকারখানা ও যোগাযোগ খাতে জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং কৃষি সম্প্রসারণের ফলে ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৬.৪৪ বিলিয়ন মেট্রিক টন। অথচ ২০ বছর আগেও এর পরিমাণ ছিল ২০ বিলিয়ন মেট্রিক টন। এই কার্বন নিঃসরণের কারণেই অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। আইপিসিসি’র …
নঁওগা জেলার স্থানীয় জেলা প্রশাসন থেকে যখন মহিন্দ্র লাকড়াদের ঘরটা পাকা করে দেয়া হয়, আর দশটা পরিবারের ছেলেমেয়েরাও তখন যেন এক নতুন আলোর সন্ধান পেল।
মহিন্দ্র লাকড়ার বাবা বাসুদেব লাকড়া পেশায় একজন ভ্যানচালক। মা বুলবুলি তির্কী ঘরবাড়ির কাজ সামলে নিয়ে নিজেও স্বামীর সঙ্গে কখনও কখনও ভ্যান ঠেলার কাজে নেমে পড়েন। বুলবুলি তির্কী ব্র্যাক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি (আইডিপি)-র ইন্ডিজেনাস পিপলস্ প্রজেক্টের একজন গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন (ভিডিও) সদস্য।
২০১৮ সালে গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন (ভিডিও) সদস্যরা আইডিপি ইন্ডিজেনাস পিপলস্ প্রজেক্টের শিক্ষা সহায়তার জন্য মহিন্দ্র লাকড়াকে মনোনীত করে। এটি না হলে হয়তো অর্থের অভাবে লেখাপড়াটাই হতো না। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফি, বই কেনা এবং …
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্র্যাক এবং জাপানের কয়েকজন চিকিৎসক যক্ষ্মার চিকিৎসা নিয়ে মানিকগঞ্জে মাঠ গবেষণা শুরু করেন, যার ফলশ্রুতিতে ‘ডটস’ (ডাইরেক্টলি অবজারভড ট্রিটমেন্ট)-এর যাত্রা শুরু হয়। এ বিষয়ে তিনি ল্যানসেটে একটি ‘শর্ট কমিউনিকেশন’ পাঠান। সেটিই ল্যানসেটে প্রকাশিত তাঁর প্রথম লেখা।
১৯৯২ সালে ল্যানসেটে আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর প্রথম লেখা প্রকাশ পায়। ‘ল্যানসেট’ হলো সেরা এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী এক চিকিৎসা সাময়িকী। এরপর আরও বেশ কয়েকটি লেখা ছাপা হয়েছে বিশ্বনন্দিত ওই সাময়িকীতে। ল্যানসেট কর্তৃপক্ষ বিশেষ মর্যাদা দিয়ে তাদের সাময়িকীতে আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর প্রোফাইল তৈরি করে। ল্যানসেটে প্রকাশিত তার রচনাসমূহে বারবার উঠে এসেছে দেশের মানুষের কথা, নানা স্বাস্থ্য সূচক উন্নয়নের কথা, আমাদের …
একদা যে জামদানি ছিল আমাদের গর্ব, সময়ের বিবর্তনে সেই জামদানিশিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছিল। জামদানির যে ডিজাইনগুলো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ছিল, সেগুলোও আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেই বিলুপ্তপ্রায় গৌরব পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। কীভাবে সম্ভব হল সেটা? কারা করল এই কাজটি?
অনেকেরই হয়ত জানা নেই, হারিয়ে যাওয়া এই জামদানিকে বাংলায় ফিরিয়ে আনার পেছনে আড়ংয়ের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে। কালের আবর্তনে বিলুপ্তপ্রায় জামদানিশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে আড়ংয়ের উদ্যোগে ১৯৭৮-৭৯ সালে ঢাকার ডেমরা এলাকায় একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, বংশানুক্রমিকভাবে ডেমরা এলাকায় যেসব পরিবার জামদানি শাড়ি তৈরি করত, তারা যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় জামদানিশিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আড়ং …
কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি অর্থনীতি খাত এবং দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে অতিদরিদ্রের হার ছিল ১০.৫% (সূত্র: অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা)। বাংলাদেশ পরিসখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ২০.৫%। সরকার, বেসরকারি সংস্থাসহ অন্যান্য অংশীজনেরা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি ঘটছে অত্যন্ত ধীর গতিতে।
দেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর হার উভয়ই সম্প্রতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়াতে সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে শাটডাউনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি আবারও একটি বড়ো ধাক্কার সম্মুখীন হতে পারে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে সাফল্য …
পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি যুদ্ধ, সন্ত্রাস ও নিপীড়নের শিকার হয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন অনুসারে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে নির্যাতিত হয়ে নিজের বাড়ি ও দেশ থেকে নির্বাসিত হওয়া ব্যক্তিরা শরণার্থী। সারা পৃথিবীতে এই শরণার্থীরা সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত (Vulnerable) অবস্থায় আছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীরা আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
২০১৭ সালের ২৫শে আগস্টের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের হত্যা করে, গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়, ব্যাপক যৌন সহিংসতা চালায়। ফলে তাদের …
২০শে জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়টি বিবেচনায় আনলে দিনটির আলাদা একটি একটি গুরুত্ব বহন করে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর করণীয় দিকটিও জড়িত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হিসেবে মানবিকবোধ থেকে সরকারের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু সুরক্ষা, ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন (ওয়াশ) এর মতো বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি।
গত বছর থেকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির (এইচসিএমপি) পরিচালনায় এই পর্যন্ত প্রায় …
আপনি জানেন কি, হারানো বাস্তুসংস্থান ভূমির ১৫ শতাংশ পুনরুদ্ধার করতে পারলে ৬০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব?
এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার’। বাস্তুসংস্থান হচ্ছে উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অন্যান্য জৈব ও অজৈব পদার্থ সমন্বিত প্রাকৃতিক একক যেখানে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় একটি জীবনধারা গড়ে ওঠে।
মানুষ এই বাস্তুসংস্থানের অংশ হয়েও শত শত বছর ধরে তা ধ্বংস করতেই মেতে আছে। অতিরিক্ত কৃষিজমির সম্প্রসারণ, নগরায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের ফলে প্রকৃতি আজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি হেক্টর বন উজার হয়, আয়তনে যা দক্ষিণ কোরিয়ার সমান।
বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বের ৩২০ কোটি অর্থাৎ ৪০ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের …
মো. মোয়াজ্জেম হাসান ১৯৭২ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের প্রথম কর্মী হিসেবে সুনামগঞ্জের শাল্লার দিরাই ক্যাম্পে যোগদান করেছিলেন। যোগদানের কিছুদিন পরেই তাঁকে হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে মার্কুলী ক্যাম্পে পাঠানো হয়। ব্র্যাকের শুরুর দিকের পুনর্বাসন কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
১৯৭৭ সালে ব্র্যাকের প্রথম সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ ‘ব্র্যাক প্রিন্টার্স’-এর কার্যক্রম শুরু হলে তাঁকে সেখানে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরপর প্রায় ৩০ বছর তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে ব্র্যাক থেকে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত তিনি ‘ব্র্যাক প্রিন্টার্স’-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৭ই মে ২০২১ তারিখ সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকাস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় (ইন্না …
প্রত্যন্ত গ্রামের দুজন নারী কেমন করে করোনাকাল পার করলেন সেই গল্পটি জানাতে চাই।
প্রথমজন রংপুর জেলার আমরুলবাড়ি গ্রামের সিন্ধুবালা।
কোভিড-১৯ এর শুরু থেকে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থবিধির সব নিয়ম মেনে চলেছেন। পাশাপাশি আশেপাশের সকলে যেন মাস্ক ব্যবহার করেন, কিছুক্ষণ পরপর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোন এবং ভিড় এড়িয়ে চলেন সেজন্যও সচেতনতামূলক কাজ করেছেন। এমনকি যারা খাবারের অভাবে ছিল তিনি তাদেরও সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন।
মহামারি শুরুর পর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে তিনি বুঝতে পারেন আগামী দিনগুলো হয়তো কঠিন হবে। তিনি ধারণা করতে পারছিলেন আয়রোজগারে টান পরতে পারে। এ কারণে শুরুর দিকেই পাইকারদের কাছে নিজের নার্সারির অনেক চারা গাছ বিক্রি …
“আমি জীবনে অনেক পরাজিত পুরুষ দেখেছি, কিন্তু কোনো পরাজিত নারী দেখিনি”
– স্যার ফজলে হাসান আবেদ
ত্রিশ বছর আগে কলেজে পড়ার সময় কাছমিনের বিয়ে হয়। স্বামী পুলিশের কর্মকর্তা। বিয়ের পর পড়ালেখার সুযোগ না পেলেও স্বামী আর তিন বছরের মেয়ে নিয়ে সুখেই ছিলেন কাছমিন।
বিবাহিত জীবন ছয় বছরে গড়ানোর আগেই তিনি বুঝলেন স্বামীর পরকীয়া করছে । প্রেমিকা কাছমিনের আপন চাচাতো বোন। প্রতিবাদ করেন স্বাভাবিক নিয়মেই। কিন্তু বিনিময়ে মেলে প্রচণ্ড শারীরিক, মানসিক নির্যাতন। তিন বছরের মেয়েসহ এক কাপড়ে ঢাকার বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। এরপর তিনি আশ্রয় নেন জামালপুরে শ্বশুর বাড়িতে। স্বামীর মারধোর, অপমান সব সহ্য করার পরও আশায় ছিলেন …
“বাবার বাড়ি এই গাঁয়ে,
শ্বশুরবাড়ি ঐ।
তোমার বাড়ি কই গো নারী?
তোমার বাড়ি কই?”
আপনমনেই অনেকদিন আগে শোনা একটা কবিতার কিছু লাইন মনে পড়ল সুফিয়ার কথা শুনে। ২০০৫ সালের আলট্রা-পুওর কর্মসূচির একজন গ্র্যাজুয়েট তিনি। প্রথম জীবনে স্বামী ও ৩ কন্যা সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার থাকলেও, অল্প বয়সেই তিনি স্বামীকে হারান।
এরপর থেকেই বদলে যায় তার জীবন।
জীবনের কষ্টের কথা বলছিলেন সুফিয়া, “মেয়ে মানুষের কী সত্যিই আলাদা কোনো ঘর আছে? পরিচয় আছে? যতদিন স্বামীর ঘর করতাম, ততদিন থাকতাম শ্বশুরের ভিটায়, যখন ঐ বাড়ি থেকে বের করে দিল, এসে উঠলাম বাপের ভিটায়, সেই ভিটাও ভাই তার নিজের নামে লিখে নিল, আমার …