স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে

June 9, 2020

এক সহকর্মীর মধ্যে করোনার লক্ষণ ছিল। জ্বর-সর্দি-গলাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকায় গত ৭ই এপ্রিল তিনি ওই সহকর্মীকে নিয়ে বন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন করোনা টেস্ট করাতে। সাবধানতা হিসেবে নিজের টেস্টও করিয়েছিলেন। ১১ই এপ্রিল টেস্টের রেজাল্ট আসে। দেখা যায়, তার পজিটিভ এবং সহকর্মীর নেগেটিভ!

“নিয়মিত মাস্ক পরেছি। গ্লাভস ব্যবহার করেছি। সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করেছি। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সচেতনতার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তারপরও কীভাবে আক্রান্ত হলাম- তা আমি বুঝতে পারি না। মনে হয়, এর মধ্যেও হয়তো আমার কোথাও কোনো ভুল ছিল। সেই কারণেই ভাইরাসটি আমার মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। আমাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছে।”

নিজের পজিটিভ, সহকর্মীর নেগেটিভ!
কথা হচ্ছিল ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের এরিয়া ম্যানেজার আনন্দ সরকারের সঙ্গে। তিনি নারায়ণগঞ্জ বন্দরে কাজ করেন। করোনা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। করোনার কোনো লক্ষণ তার মধ্যে ছিল না। বরং এক সহকর্মীর মধ্যে করোনার লক্ষণ ছিল। জ্বর-সর্দি-গলাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকায় গত ৭ই এপ্রিল তিনি ওই সহকর্মীকে নিয়ে বন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন করোনা টেস্ট করাতে। সাবধানতা হিসেবে নিজের টেস্টও করিয়েছিলেন। ১১ই এপ্রিল টেস্টের রেজাল্ট আসে। দেখা যায়, তার পজিটিভ এবং সহকর্মীর নেগেটিভ!

বাসাতেই আইসোলেশন
এরপর আইইডিসিআর-এর পরামর্শ মতো তিনি নিজের বাসাতেই আইসোলেশনে থাকেন। করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর তিনি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। মনের মধ্যে ভিড় করে ভয় ও শঙ্কা। টেনশনে জ্বর চলে আসে। হালকা কাশির সঙ্গে মনে হয় গলাটাও কেমন ব্যথা-ব্যথা করছে! মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েন। ওদিকে বাড়িতে অসুস্থ বাবা। কয়েকমাস আগে বাইপাস সার্জারি হয়েছে। ছেলে করোনা আক্রান্ত হয়েছে এ খবর শুনলে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এসব কথা ভেবে তার দুশ্চিন্তা যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল।

“খাবার খেয়েছি, গান শুনেছি এবং সিনেমাও দেখেছি”
করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর তিনি ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদেরকে জানান। সকলেই তাকে সাহস জুগিয়েছেন। মনোবল অটুট রাখতে সহায়তা করেছেন। বন্দরের একজন চিকিৎসক নিয়মিত তার খোঁজ নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। কিছু ওষুধও দিয়েছিলেন।

আনন্দ সরকার বন্দরে একটি বাসায় একাই থাকেন। চিকিৎসকদের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে দীর্ঘদিন করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন। প্রথম প্রথম তিনি যা খেতেন, সেগুলো স্বাদহীন ও গন্ধহীন লাগত। নিজেই রান্না করে খেয়েছেন। নিয়মিত গরম পানির ভাপ নিয়েছেন। মাছ, মাংস, ডিম, লেবু, মাল্টা ও টকজাতীয় ফল বেশি পরিমাণে খেয়েছেন। অবসরে শুনেছেন গান। ঘরে বসে কম্পিউটারে সিনেমাও দেখেছেন। সহকর্মী, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন-চিকিৎসক সবাই তাকে সাহস জুগিয়েছেন। সহকর্মীরা প্রয়োজন মতো তরি-তরকারি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য কিনে তার ঘরের সামনে রেখে আসত। সেগুলো তিনি ঘরে নিয়ে যেতেন।

সাত দিন আইসোলেশনে থাকার পর আবারও টেস্ট করানো হয়। এবারও পজিটিভ আসে। এটা জেনে তিনি বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন। কিন্তু সকলের অভয় বাণী তাকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। তৃতীয়বার টেস্ট করে রেজাল্ট নেগেটিভ এলে নিশ্চিন্ত হয়েছেন। এরপর চতুর্থবারের মতো টেস্ট করলে রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়ায় গত ২৮শে মে বন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পান সুস্থতার ছাড়পত্র।

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র ‘মনোবল ও সাহস’
আনন্দকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার সবচেয়ে বড়ো অস্ত্র কী? তিনি বললেন, “মনোবল ও সাহস। কোনোভাবেই ভয় পেলে চলবে না। আমি প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। জ্বর এসেছিল। স্বাদ-গন্ধ পেতাম না। এমনকি মাঝে মাঝে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। এখন আমার মনে হয়, পুরো ব্যাপারটিই ছিল মানসিক। যখন চিকিৎসক জোর দিয়ে বললেন, আপনার কোনো কিছুই হয়নি, খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন, বাবা-মাকে দেখতে যেতে পারবেন, এখন শুধু নিয়ম মেনে চলুন এবং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করুন, এরপর থেকেই আমি একটু একটু করে মনের জোর ফিরে পাই। আর মনের জোর ফিরে পাওয়ার পরে লক্ষ্য করলাম আমার অসুস্থতার সব উপসর্গগুলো কোথায় যেন পালিয়ে গেল!”

কাজেই সহকর্মীদেরকে বলব, করোনায় আক্রান্ত হলে ভয় পাবেন না। মনে জোর রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং ভালোভাবে খাওয়াদাওয়া করুন। দেখবেন করোনা পালাবে।

3.8 5 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments