অসহায়, দরিদ্র মানুষ তাদের সুখ-দুঃখে আমাকে সাথি করে নেন। বিপদে পড়লে মনে করেন আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব, মনে কোনো দ্বিধা না রেখেই আমাকে তাদের সমস্যার কথা বলেন। এই মহামারির দিনে মনে হয় আমি তাদের পরিবারেরই একজন হতে পেরেছি।
“..আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনি পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।”
২০১৫ সালে আমি স্নাতকোত্তর পাশ করি। আমার স্বপ্ন ছিল সাধ্যমতো মানুষের পাশে থাকার। লেখাপড়া শেষ করার পর কিছুদিন সরকারি চাকরির চেষ্টা করলাম, হলো না। এরপর ব্র্যাকের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম (ইউপিজি)-তে আবেদন করি।
২০১৮ সালে আমি ব্র্যাকে যোগদান করি। চাকরি পাওয়ার পর আমি এই ভেবে খুশি হলাম যে, এই কর্মসূচিতে কাজের মাধ্যমে আমি দরিদ্র, অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারব।
ব্র্যাকের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে পরিচালিত হয়ে আসছে। কর্মজীবনের প্রথম বছরেই আমি কত মানুষের হাসি-কান্নার সাথি হলাম! আমার এক সদস্যের নাম রোকসানা। তার স্বামী নোয়াখালীতে দিনমজুরের কাজ করেন। রোকসানা আপা নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে।
রোকসানা আপার সাথে প্রায়ই ফোনে কথা হতো। সাবধান থাকতে বলতাম। সেই সাথে তাকে আরও বলতাম, যেকোনো দরকারে যেন আমাকে তিনি জানান। ২৬শে মার্চ সকাল সাতটায় রোকসানা আপার স্বামী ফোন করে জানান আপার প্রসব বেদনা উঠেছে। শরীর খারাপ, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। কিন্তু এসময় তো সাধারণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একটা ব্যবস্থা করতেই হবে, এই ভেবে আমি তক্ষুণি গেলাম রোকসানা আপার বাড়িতে।
আমাকে দেখে রোকসানা আপা যেন ভরসা পেলেন। আপা ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলার পর আমি চিতলিয়া গ্রাম সামাজিক শক্তি কমিটির সভাপতি ভাইকে ফোন করি। তাকে জরুরি প্রয়োজন সম্পর্কে জানিয়ে আমি রোকসানা আপাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাহায্য চাই। তিনি আমাকে সাহায্য করবেন বলে জানান এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সিএনজি অটো রোকসানা আপার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
রোকসানা আপাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার ব্যবস্থা করি। স্থানীয় একটি ফার্মেসির সাথেও কথা বলি, যেন প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়। যা হোক সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় রোকসানা আপা আজ পুত্র সন্তানের জননী।
এখানেই আমার ভালো লাগা। অসহায় দরিদ্র মানুষ তাদের সুখ-দুঃখে আমাকে সাথি করে নেন। বিপদে পড়লে মনে করেন আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব, মনে কোনো দ্বিধা না রেখেই আমাকে তাদের সমস্যার কথা বলেন। এই মহামারির দিনে মনে হয় আমি তাদের পরিবারেরই একজন হতে পেরেছি।
অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে এমনভাবে সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে পারতাম কি না জানি না। তাই আমি বলি, এখানেই বেশ আছি। দেশের মানুষকে মহামারি থেকে নিরাপদ রাখার কাজটি এখন আমি মন দিয়ে করছি। সবাই আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে, আমরা আবার নির্ভয়ে নিরাপদে পথে বের হব- এটাই এখন আমাদের সকলের আশা।
অনুলিখন ও সম্পাদনা- সুহৃদ স্বাগত ও তাজনীন সুলতানা
Love you BRAC. GOD bless you.