নববর্ষের আচার-অনুষ্ঠান যা-ই হোক না কেন, নববর্ষ মানেই নব উদ্যম, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন! আর নতুনকে স্বাগত জানাতে আমাদের উৎসাহের অন্ত নেই। নতুন বছরের উচ্ছ্বাস যেন হয় সারা বছরের প্রেরণা।
হালখাতা, পান্তাভাত খাওয়া, গ্রামীণ মেলার আয়োজন-এসব আমাদের বর্ষবরণের ঐতিহ্য। ইংরেজি নববর্ষকেও আড়ম্বরের সঙ্গে বরণ করে নিই আমরা, বরণ করে বিশ্ববাসী। নতুন বছরটি যাতে ভালোভাবে কাটে সেজন্য অনেক দেশ পালন করে নানা আচার-অনুষ্ঠান। স্প্যানিশরা ১২টি আঙুর খেয়ে নতুন বছর শুরু করে। ফিলিপাইনের লোকজন নববর্ষে বল প্রিন্টের জামা পরে ও গোলাকার খাবার দিয়ে টেবিল সাজায়। আর্জেন্টিনার লোকেরা বছরের প্রথম দিন শিমের বিচি রান্না করে খায়। এসবই মানুষ করে, যাতে নতুন বছরে তাদের মনের আশা পূর্ণ হয়।
নববর্ষের আচার-অনুষ্ঠান যা-ই হোক না কেন, নববর্ষ মানেই নব উদ্যম, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন! স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে নতুন কিছু করার ইচ্ছা, জীবনের প্রতিটি দিনকে অর্থবহ ও সুন্দর করার চেষ্টা। মানুষের মধ্যকার সেই সুপ্ত সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ। প্রয়োজন নিজের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা জাগিয়ে তোলা। এক্ষেত্রে ব্র্যাক সবসময়ই সহায়কের ভূমিকা পালন করে আসছে।
সময়ের অগ্রগতির সঙ্গেসঙ্গে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে পা রেখেছে, সেইসঙ্গে উন্নত হয়েছে দেশের মানুষের জীবনমান। স্বাভাবিকভাবে এই অগ্রগতির সঙ্গে পালটেছে মানুষের সেবার চাহিদা। শুধু মৌলিক অধিকার ও সেবা নয়, সবাই এখন মর্যাদাশীল জীবন ও উন্নত সেবা প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে।
সবাই মিলে ভালো থাকার জন্য প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি পেশাজীবনে দক্ষ হয়ে ওঠাও জরুরি। সেজন্য ব্র্যাক সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধানের ওপর যেমন জোর দিচ্ছে, তেমনি গুরুত্ব দিচ্ছে মানুষের পেশাভিত্তিক সাফল্য অর্জনে দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোতে।
বর্তমানে ব্র্যাকের কর্মসূচিগুলোর সেবাপ্রদানের ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি বাংলাদেশের তরুণদের বেকারত্বের সমস্যা মোকাবেলা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। শহরের নিম্নআয়ের মানুষ যাতে নাগরিক অধিকার ও নগরায়ণের প্রাপ্য সুযোগসুবিধা লাভ করতে পারে সেজন্য নগর উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। মানুষের জমিজমাসংক্রান্ত সেবাকে আরও সাশ্রয়ী, সুলভ এবং সহজ করতে সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করছে ভূমিবন্ধু।
আর্থিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গেসঙ্গে লোকেরা তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে আরও সচেতন হয়ে উঠেছে। বেড়েছে এতৎসংক্রান্ত প্রত্যাশা। ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুলের মাধ্যমে মানুষের এই প্রত্যাশাগুলোরই প্রতিফলন ঘটাতে চায়। গ্রামাঞ্চলে ও শহরের বস্তি এলাকায় চিকিৎসাসেবাকে হাতের নাগালে এনে দিতে ব্র্যাক চালু করেছে টেলিমেডিসিন সেবা।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য পরিচালিত হচ্ছে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম। বড়ো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে বেঁচে যাওয়া এই রোহিঙ্গাদের মানবিক মর্যাদা রক্ষায় ব্র্যাক নিরন্তর কাজ করে চলেছে। এ ছাড়াও মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে হাত ধোয়ার অভ্যাসসহ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলা, মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষা, বাল্যবিয়ে রোধ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীরব না থেকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে নানা ধরনের ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে।
নতুন মানেই নব অঙ্গীকার। নতুন কর্মপ্রেরণা। বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ডাক। মানুষের প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে ব্র্যাক যে উদ্যোগগুলো চালু করেছে, তা নতুন বছরে মানুষের যাত্রাপথে জোরালো প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। শুভ হোক নতুন বছর। শুভ নববর্ষ। স্বাগত ২০১৯।