আমার ব্র্যাক জীবন: ল্যানসেটে বাংলাদেশ কথা

July 11, 2021

১৯৯৭ সালে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব বা ইনফেকশনের ওপর ব্র্যাক কার্যক্রমের প্রভাব নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রবন্ধ আকারে ছাপা হয়েছে ল্যানসেটে। যার লেখক ছিলেন আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। তারও আগে ১৯৯৩ সালে আরেকটি লেখা ছাপা হয়েছিল তাঁর। উল্লিখিত লেখায় মুখে খাওয়ার স্যালাইন কীভাবে আমাদের সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল, সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছিল। ১১-১২ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্র্যাক এবং জাপানের কয়েকজন চিকিৎসক যক্ষ্মার চিকিৎসা নিয়ে মানিকগঞ্জে মাঠ গবেষণা শুরু করেন, যার ফলশ্রুতিতে ‘ডটস’ (ডাইরেক্টলি অবজারভড ট্রিটমেন্ট)-এর যাত্রা শুরু হয়। এ বিষয়ে তিনি ল্যানসেটে একটি ‘শর্ট কমিউনিকেশন’ পাঠান। সেটিই ল্যানসেটে প্রকাশিত তাঁর প্রথম লেখা।

১৯৯২ সালে ল্যানসেটে আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর প্রথম লেখা প্রকাশ পায়। ‘ল্যানসেট’ হলো সেরা এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী এক চিকিৎসা সাময়িকী। এরপর আরও বেশ কয়েকটি লেখা ছাপা হয়েছে বিশ্বনন্দিত ওই সাময়িকীতে। ল্যানসেট কর্তৃপক্ষ বিশেষ মর্যাদা দিয়ে তাদের সাময়িকীতে আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর প্রোফাইল তৈরি করে। ল্যানসেটে প্রকাশিত তার রচনাসমূহে বারবার উঠে এসেছে দেশের মানুষের কথা, নানা স্বাস্থ্য সূচক উন্নয়নের কথা, আমাদের অর্জনের কথা, আগামীর কথা।

১৯৯৭ সালে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব বা ইনফেকশনের ওপর ব্র্যাক কার্যক্রমের প্রভাব নিয়ে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রবন্ধ আকারে ছাপা হয়েছে ল্যানসেটে। যার লেখক ছিলেন তিনি। তারও আগে ১৯৯৩ সালে আরেকটি লেখা ছাপা হয়েছিল তাঁর। উল্লিখিত লেখায় মুখে খাওয়ার স্যালাইন কীভাবে আমাদের সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল, সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছিল। ১১-১২ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল।

রকফেলার ফাউন্ডেশনে যোগ দেওয়ার পরপর ‘ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ’ (ইউএইচসি) বা সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে বিশ্ব জুড়ে মতামত সৃষ্টি করার দায়িত্বপালন করেন তিনি। নিউইয়র্কে তাঁর জ্যেষ্ঠ সহকর্মী আরিয়েল পাবলোস, নিউইয়র্ক টাইমস-এর কলাম লেখক লরি গেরেটে এবং আহমেদ মোশতাক রাজা চৌধুরী- তিনজনের লেখা ইউএইচসি সংক্রান্ত রচনাটি প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। ল্যানসেট মানেই তো বিপুল প্রচার।

রকফেলার ফাউন্ডেশনে বৈশ্বিক বিভিন্ন কাজ যেমন ইউএইচসি-র সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছাড়াও তিনি ছিলেন ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্য বিষয়ে এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য ল্যানসেট একটি সিরিজ বের করার ক্ষেত্রে রকফেলার ফাউন্ডেশন কিছু অর্থ সহায়তা দিয়েছিল। এই সিরিজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং এর সফল সমাপ্তির পর তার মনে মনে ভাবছিলেন বাংলাদেশের ওপর এমন একটি সিরিজ করলে কেমন হয়। দেশের নানা স্বাস্থ্য সূচক উন্নয়নে একটি অতি সুন্দর স্টোরি আছে যা বহির্বিশ্বে তেমন প্রচার হয়নি।

তিনি খুব দ্রুত একটি কনসেপ্ট নোট তৈরি করে ল্যনসেটে প্রেরণ করেন। যেখানে ছিল সম্ভাব্য সিরিজের যৌক্তিকতা, কী ধরনের পেপার হতে পারে তার একটি তালিকা এবং সম্ভাব্য গবেষকদের নাম। ল্যানসেটের প্রধান সম্পাদক রিচার্ড হর্টন এই সিরিজে খুব আগ্রহ প্রকাশ করায় খুব দ্রুতই কাজ শুরু হয়।

সব মিলিয়ে প্রায় পঁয়ত্রিশজন গবেষক সিরিজের ছয়টি প্রবন্ধে যুক্ত করা হয়। সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ- কর্মশালা, চুলচেরা বিশ্লেষণের পর লেখকদের প্রবন্ধ লেখার আহবান জানানো হয়। ল্যানসেট-এর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজে তাদের মনোনয়ন জানিয়ে চিঠি দেয়। এভাবেই কাজ শুরু হয়। প্রথম খসড়া এসে গেলে তা রিভিউ করা- বিশ্লেষণের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ইংরেজি ভাষার সঠিক প্রয়োগসহ অনেক বিষয়ই এই রিভিউতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রবন্ধগুলো প্রথম দফায় রিভিউ করার দায়িত্বপালন করেন আব্বাস ভূঁইয়া এবং মোশতাক ভাই। দুবার রিভিউ এবং লেখকরা পুনর্বার সংশোধন করার পর তা ল্যানসেটে সাবমিট করা হতো। ল্যানসেট এরপর তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়া শুরু করত। প্রতিটি পেপারই নূন্যপক্ষে দু’জন নিরপেক্ষ সমালোচক বা রিভিউকারের কাছে পাঠানো হতো। আরেকবার সংশোধনের জন্য তাদের কমেন্টগুলো লেখকদের জানানো হতো। নতুন খসড়া ল্যানসেট সম্পাদকের মনঃপুত হলে তবেই তা সাময়িকীতে ছাপানোর জন্য তৈরি বলে বিবেচিত হতো। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াতে মোট দু’বছরের মতো সময় লেগেছিল।

এই সিরিজে মূল প্রবন্ধ ছাড়াও আরও কিছু কিছু লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, যাকে বলা হয় ‘কমেন্টারি’। সাধারণতঃ সিরিজ প্রতিপাদ্য বিষয়ে বিশদ জ্ঞানের অধিকারী আন্তর্জাতিক কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে এই কমেন্টারি লেখার জন্য আহবান জানানো হয়। স্যার ফজলে হাসান আবেদ এবং অমর্ত্য সেনের কমেন্টারি পুরো সিরিজকে এক বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।

১৯শে নভেম্বর ২০১৩। সিরিজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। সভাপতি স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ১৯৯৫ সাল থেকে ল্যানসেটের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বপালনকারী রিচার্ড হর্টন উক্ত অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য প্রদান করেন।

 

লেখকের কথা, লেখকের ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments