আগামী দিনের আমরা

May 30, 2020

আমাদের বাড়াতে হবে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি । বলা যায়, শারীরিক ও মানসিক শক্তি অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। টিকা বা ভ্যাকসিন এবং সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর সঙ্গে লড়াই করে আমাদের টিকে থাকতে হবে।

সদা পরিবর্তনশীল এই পৃথিবী। পরিবর্তনের স্রোতে ভাসতে ভাসতে আমরা মুখোমুখি হই সংকটের, নানান ধরনের প্রতিকূলতার ঝড় আমাদের জীবন ও চিন্তাভাবনাকে ওলটপালট করে দেয়। তখন লড়াই চলে নিজের মনের সাথে, নিজের অভ্যস্ত জীবনযাত্রা ও মানসিকতার সাথে।

প্রাণঘাতী মহামারি আমাদের ঠেলে দিয়েছে এক অপ্রত্যাশিত নতুন বাস্তবতার দিকে। পৃথিবীর চির ব্যস্ততা ফিরিয়ে আনতে বিশ্বজুড়ে চলছে গবেষণা; অর্থনীতি, চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলো এক পাহাড়সম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। লাখো মানুষের ভবিষ্যত অনিশ্চিত, আজ শুধু লড়াই করে বেঁচে থাকা।

আমরা জানি, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) হলো এই নতুন বাস্তবতা। খুব দ্রুতই যে এই ভাইরাস পৃথিবী থেকে চলে যাবে, এমন বলা যাচ্ছে না। ‘নিউ নরমাল’ মানে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’-এর সঙ্গে আমাদের ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে হবে, গড়ে তুলতে হবে নতুন জীবনযাপনের অভ্যাস।

আমাদের বাড়াতে হবে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি । বলা যায়, শারীরিক ও মানসিক শক্তি অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। টিকা বা ভ্যাকসিন এবং সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর সঙ্গে লড়াই করে আমাদের টিকে থাকতে হবে। সেজন্যই কিছু নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, আবার কিছু অভ্যাস ত্যাগ করা জরুরি।

বাইরে গেলে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ইত্যাদি অভ্যাস তো মেনে চলতেই হবে। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১০টি বিষয়ের ওপর খুবই জোর দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে প্রত্যেককেই এই বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

১. প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাক-সবজি এবং পুষ্টিকর খাবার খান।  নিজের ইমিউনিটি বাড়িয়ে তুলুন।

২. অ্যালকোহল এবং চিনিযুক্ত পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।

৩. ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। ধূমপানের ফলে অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এটি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শিশুদের জন্য প্রতিদিন এক ঘণ্টা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অন্তত আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া নিজেকে চাঙা রাখতে টিভি বা অনলাইনে কোনো ভিডিও দেখে ব্যায়াম করা যেতে পারে। গানের তালে তালে নাচ বা যোগ ব্যায়াম অথবা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করলে যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম হয়।

৫. অফিসে যাবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা এবং আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, অন্যদেরও মানতে উৎসাহিত করুন।

৬. যদি ঘরে বসে কাজ করেন, তবে একই অবস্থায় বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর ৩ মিনিট বিরতি নিয়ে, উঠে দাঁড়ান, হাঁটুন অথবা হালকাভাবে শরীরকে স্ট্রেচ করুন।

৭. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। দুর্যোগের সময় বিষণ্ণ, বিভ্রান্ত বা ভীত হওয়াটা স্বাভাবিক। এ সময়ে অন্যদের ওপর ভরসা রাখুন এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার আশেপাশের মানুষের দিকে প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিন সহায়তার হাত, তারাও বিপদে আপনার পাশে দাঁড়াবে। এই হৃদ্যতা সামাজিক জীবনেরই একটি অংশ। পরিবার, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের খোঁজ নিন।

৮. গান শোনা, বইপড়া অথবা সিনেমা দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিজের মনকে হালকা রাখার জন্য মানসিক বিনোদন খুবই কাজে দেবে।

৯. সারাক্ষণ খুব বেশি বেশি খবর জানার চেষ্টা করবেন না। কারণ এটি আপনাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করতে পারে। দিনে একবার বা দুইবার বিশ্বস্ত কোনো সূত্র বা মিডিয়া থেকে তথ্য জেনে নিন। অনলাইনে যা দেখব তা বিশ্বাস করার মানসিকতা ত্যাগ করুন।

১০. সারাদিন নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করে না রেখে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি এবং মাঝে মাঝে ছাদে ঘুরতে যান। পরিবারকে সময় দিন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলুন। ঘরের কাজে সহায়তা করার মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করুন। এটি করতে পারলে নিজের মধ্যেই উদ্যম ফিরে আসবে।

 

করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে হলে হয়তো অনেক পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সবল থাকুন। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের ওপর জোর দিন। শক্তিশালী ইমিউনিটি সিস্টেমই আমাদের রক্ষা করবে এবং কঠোর মানসিক প্রস্তুতিই সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। অনেক সময় বনের বাঘ নয়, মনের বাঘের কাছে আমরা হেরে যাই। সুতরাং পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করুন। কারণ লড়তে হবে নিজেকেই। জিততে হবে সবাইকে নিয়ে।

 

সম্পাদনা- ইকরামুল কবীর, তাজনীন সুলতানা

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments