তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি কক্সবাজারের অস্থায়ী আবাসগুলোতে বসবাসরত মিয়ানমার থেকে আগত মানুষেরা। মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা সেখানে ব্যাপক। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত মানুষেরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এদেশে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। তারা ক্ষুধার্ত, তারা ক্লান্ত।
ক্ষুধার তাড়না সবচেয়ে বড় তাড়না। একবেলা খাবার খেয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর অনেক ধরণের অভাব আছে, কিন্তু খাদ্যের অভাবটা আঘাত করছে তাদের সবচেয়ে বেশি। দুপুরের খাবারের লাইনে মানুষের ঢ্ল দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমরা একুশ শতকে আছি। এই সময়ে এমন দৃশ্যে থমকে যায় আমাদের ক্রমঅগ্রসরমান সভ্যতা, প্রশ্নবিদ্ধ হয় বিবেক এবং মানবতাবোধ।
খাবারের জন্য হাহাকার। মেয়েটির খাবারের পাত্র নিজের মনে করে ছেলেটি নিয়ে যেতে চায়। তার পাত্রটিও ছিল একই রকম দেখতে। কিন্তু এই পাত্রের ওপর নিজের অধিকার হারালে মেয়েটিকে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই সেও কাঁদতে থাকে। পরে জানা যায় পাত্রটি মেয়েটিরই। আর, একটি পাত্রের অভাবে ছেলেটির খাওয়া হয় না।
ধরা যাক, থাইংখালি অস্থায়ী আবাসের কথা। দুপুরের খাবারের সময় কেউ যদি ওখানে অবস্থান করেন তাহলে তাকে প্রত্যক্ষ করতে হবে কিভাবে হাজার হাজার মানুষ একসাথে ছুটে যাচ্ছে খাবারের লাইনের দিকে। বলা যেতে পারে, ওই আবাসে থাকা ২০,০০০ মানুষ একসাথেই ছুটতে থাকে। দৃশ্যটি আরও করুণভাবে আপনার চোখে ধরা দেবে যখন আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন যে এদের বেশির ভাগই শিশু। ওদের অনেকেই শেষ খেয়েছে গতকাল এ সময়েই। ছোট্ট পেট, দুপুরে খেলে বিকেলেই ক্ষিদে পাবার কথা। পায়ও। কেউ হয়ত বাবা মা’র কাছে চায়, কারো চাওয়ার মতই কেউ নাই। তাইতো এত তীব্র ক্ষুধা নিয়ে ওরা ছুটে যায়; আধুনিকতা, সভ্যতা, আলোকিত বিবেক এসব কিছুর মাথা এসময় হেঁট হয়ে যায়। শিশুদের মধ্যে কারো কারো দৌড়ানোর সময় বাশের বেড়াও ডিঙ্গানো লাগে না, ওরা যে সেটার নিচ দিয়েই চলে যেতে পারে।
যে সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে আমরা কাজ করছি, এমন দৃশ্যের অবতারণা সেখানে হতে পারেনা। আসুন মানুষের পাশে দাঁড়াই, মানবতাকে সবার ওপরে রেখে, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াই।
ভিজিট করুন: response.brac.net