আড়ংয়ের কর্মী মনোয়ার হোসেন (কর্মীর ছদ্মনাম) । বয়স ৩৫। ঢাকায় থাকেন। সম্প্রতি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৯ দিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। তার করোনায় আক্রান্ত হওয়া, হাসপাতালে থাকা এবং সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার অভিজ্ঞতার কথা তার কাছ থেকেই শোনা যাক।
লক্ষণ কী ছিল?
মার্চ মাসের শেষের দিকে হঠাৎ একদিন আমার জ্বর আসে। সঙ্গে হালকা সর্দি-কাশি। দুদিন চলার পর প্রথমে ব্র্যাকের হটলাইনে ফোন করলাম। মোবাইলে ব্র্যাকের একজন চিকিৎসক নাপাজাতীয় ওষুধ খেতে বললেন। তাতে জ্বর একটু কমে, কিন্তু দুই-তিনঘণ্টা পর আবার আসে। দুদিন পর আবার ফোন করলাম। তিনি ডোজ বাড়িয়ে দিলেন এবং পরপর তিনদিন নাপা খেতে বলেন। তিন দিন পর আবার ফোন করলে চিকিৎসক বললেন, কোনো একটা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে দেখাতে। এদিকে আমার সর্দি-কাশিটা ক্রমেই বাড়ছিল।
তখন আমি কী করলাম?
আমি গেলাম জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তার আমাকে পিজিতে গিয়ে করোনা টেস্ট করাতে বললেন। পিজির একজন অধ্যাপক আমার কাছে ঠান্ডা-জ্বর-সর্দির কথা শুনে এবং বাহ্যিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টাইফয়েড-এর টেস্ট করাতে বললেন। সেগুলোর রিপোর্ট আসতে পাঁচদিন দেরি হলো। যেদিন রিপোর্টগুলো দেয়ার কথা সেদিন আমি খুবই কাহিল হয়ে পড়ি। আমার স্ত্রী রিপোর্টগুলো তুলে ওই চিকিৎসককে দেখালেন। রিপোর্টে টাইফয়েডের কোনো লক্ষণ পাওয়া গেল না। ডাক্তার তখন দ্রুত করোনা টেস্ট করাতে বললেন। এদিকে আমার জ্বর-কাশির পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। সেদিনই আমার স্ত্রী আমাকে পিজিতে নিয়ে করোনা টেস্ট করায়। পরদিন হাসপাতাল থেকে জানানো হয় যে, আমার করোনা পজিটিভ।
এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গেলাম। আমার শারীরিক অবস্থা দেখে কর্তৃপক্ষ দ্রুত আমাকে ভর্তি করে নেন। আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গে থাকে। পরপর চারদিন অক্সিজেন দেবার পর আমার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলো। আমি একটু একটু করে বসতে এবং দাঁড়াতে পারি। এরপর আমি আমার স্ত্রীকেও করোনা পরীক্ষা করতে পিজিতে পাঠালাম। যদিও তার মধ্যে কোনো লক্ষণ ছিল না। পরদিন জানা গেল সেও করোনা পজিটিভ। আমাকে সেবা করার পাশাপাশি সেও তখন রোগী হিসেবে একই ওয়ার্ডে ভর্তি হলো। আমরা ১১ই এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম, আর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে এলাম ২৯শে এপ্রিল। মনে হলো, আমি নতুন জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি।
আমার নিদারুণ অভিজ্ঞতা
হাসপাতালে মোট ১৯ দিন ছিলাম। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল দুঃসহ। আমাকে যে ফ্লোরে রাখা হয়েছিল সেখানে ১৩১ জন করোনা রোগী ছিলেন। তাদের অনেককে দেখেছি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে ছটফট করতে। তার পাশে থেকে যখন নিজের শ্বাসকষ্ট হতো, তখন মনে হতো, আমিও বুঝি কিছুক্ষণ পর নিথর হয়ে যাব। এ সময় কেবল সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতাম। আমার দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে প্রাণভিক্ষা চাইতাম। এই চরম দুঃসময়ে আমাকে ভরসা দিয়েছে আমার স্ত্রী। আমার সেবাযত্ন করতে গিয়ে নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছে। তবুও অটুট ছিল তার মনোবল। সব সময় সে আমাকে বলেছে, কোনো চিন্তা কোরো না, দেখো, শিগগিরই তুমি ভালো হয়ে যাবে। আমরা বাসায় ফিরে যাব। শেষপর্যন্ত তার কথাই সত্যি হয়েছে। আমরা দুজনেই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে এসেছি। ফিরে পেয়েছি সন্তানদের।
কীভাবে আমি আক্রান্ত হলাম?
২৫শে মার্চের পর থেকে আমি বাসাতেই থাকতাম। শুধু মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছি। আর একদিন সেলুনে গিয়েছিলাম চুল কাটাতে। আমার ধারণা, এখান থেকেই করোনাভাইরাস আমার মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে!
সকলের জন্য আমার পরামর্শ
আমি মনে করি, এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সবাইকেই সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। ভিড়, গণপরিবহণ, সেলুন এমনকি উপাসনালয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত। বার বার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনাগুলোও মেনে চলা খুব দরকার।
সুস্থ, সবল মানুষের জন্য হয়তো এটা ভয়াবহ কোনো রোগ নয়। কিন্তু, যারা দুর্বল, যাদের অ্যাজমা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস-এর মতো বিভিন্ন রোগ আছে, তাদের জন্য এটা সত্যিই কঠিন এক ব্যাধি। তবে আমি বলব, ভয় পাওয়া যাবে না। চিকিৎসা করাতে হবে। সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। নিয়ম মেনে চললে যে কেউই এই রোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে।
আরেকটি কথা। কারও জ্বর-সর্দি-কাশি হলে বলব, আগে করোনা পরীক্ষা করান। অন্য কিছু সন্দেহ করে খামোখা সময় নষ্ট করবেন না। এতে করে আপনি খারাপ অবস্থার দিকে যেতে পারেন। আপনার মাধ্যমে আরও বহুজনের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
করোনার রেজাল্ট যদি নেগেটিভ আসে তাহলে আপনি যেকোনো জায়গায় চিকিৎসা করাতে পারবেন। কিন্তু করোনার লক্ষণ থাকলে গুটিকয়েক বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসাসেবা পাওয়াটা দুরূহ হবে।
আর শেষ কথা হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই করোনাকে অবহেলা করা যাবে না।
We should more be careful than before.
করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষ খুবই চিন্তিত। তবে আসা করছি খুব তাড়াতাড়ি এর ঔষধ চলে আসবে। আপনার সাবধানে থাকবেন।
It’s really severe situation. We don’t need to neglect the symptoms of corona. If anyone feel the symptoms please consult with the doctors.
করোনা ভাইরাস যেমন ছিল তেমনই আছে। কিন্তু আমাদের মনোভাব পালটে গেছে। সবাই অবাধে চলাফেরা করতেছে ,কোন রকম প্রটেকশন ছাড়াই।
Be carefull
Reply
so be Carefully
nice topic