আচমকা ভয় পেয়ে হাঁসগুলো ছোটাছুটি শুরু করে দিল। কারণ উঠান থেকে দৌড়ে এসে একটি বিড়ালছানা হাঁসগুলোকে তাড়া করেছে। আরেকটি বিড়ালছানা কোলে নিয়ে টিনের দরজার ওপাশ থেকে ঘরের ভেতর উঁকি দিচ্ছে ইব্রাহিমের দু’বছরের শিশুকন্যা আমেনা।
এই পরিবারের একটি অংশ জুড়ে আছে ওই বিড়ালছানা দু’টো, একটি টিয়া পাখি এবং সাড়ে তিনশ হাঁস। এদের শোরগোলে সারাদিনই মুখরিত ইব্রাহিমের ঘর।
২০ বছর বয়সী ইব্রাহিম বি.এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র; কিন্তু এই বয়সেই নিজের গোষ্ঠীতে এক পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। গ্রামের উন্নয়নমূলক গোষ্ঠীভিত্তিক প্রতিষ্ঠান- গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার একজন সক্রিয় সদস্য সে। ইজারা নেয়া ৩৫ কাঠা জমিতে সবজি চাষ করে এবং তার পালিত হাঁসের সংখ্যা সাড়ে তিনশো। তবে যে উদ্যোগ তাকে সবার কাছে পরিচিত করেছে, তা হলো তার মতো স্বল্প পরিসরে যারা কৃষি কাজ করে তাদের উৎপাদিত পণ্য একটি নামী সুপার মার্কেট চেইন, ‘স্বপ্ন’-এর কাছে সরবারহ করার ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা।
ইব্রাহিম খুবই করিৎকর্মা ছেলে; এবং তার নিজ গ্রামের সাথে রয়েছে গভীর বন্ধন। তার বাবা সারাজীবনই কৃষিকাজ করে আসছে, কাজটিকে কিভাবে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেয়া যায় সে ব্যাপারে নতুনভাবে কিছু করার ব্যাপারে স্ব-উদ্যোগী হলো। গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সদস্য হিসেবে তার সুযোগ হয়েছে কৃষি ও হাঁস পালনের ওপর প্রশিক্ষণ নেবার; পরবর্তীতে হাঁস কেনার ঋণ এবং ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে কৃষিকাজ শুরুও এরই মাধ্যমে। বর্তমানে সে হাঁসের ডিম বিক্রী থেকে সপ্তাহে আয় করে প্রায় ১২,০০০ টাকার অধিক এবং স্বপ্ন’কে সরবরাহ করে প্রায় ৩০,০০০ টাকার অধিক কৃষিপণ্য বাজারমূল্যের কিছুটা বেশি মূল্যেই।
“আমি আমার ব্যবসাকে আরও বড় করতে চাই, আরও অনেক বড়!” মেয়েকে কোলে নিয়ে হাসতে হাসতে সে বলে।
ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের মতে, এশিয়া এবং সাহারার পাশ্ববর্তী আফ্রিকান দেশগুলোয় উৎপাদিত খাদ্যের ৮০% আসে ক্ষুদ্র কৃষিজীবিদের হতে। কিন্তু তাদের যেমন আছে জমির স্বল্পতা, তেমনি ব্যবসায়ভিত্তিক কৃষি কর্মকান্ডের অপর্যাপ্ত সুযোগ। বাজার সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা অর্জনের সুযোগও তাদের খুব কম।
এখানেই ইব্রাহিমের গল্পের শুরু। স্থানীয় কৃষিসেবা প্রদানকারী হিসেবে সে অন্য কৃষকদের দ্বারা উৎপাদিত ফসল সংগ্রহ করে এবং সেগুলোর যথাযথ পরিবহন নিশ্চিত করে পাঠানো হয় সুপারমার্কেটে। কৃষকরা শুধু যে সময় এবং পরিবহন খরচ কিছুটা বাঁচাতে পারছেন তাই-ই নয়, তারা বাজার মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামেও পণ্য বিক্রি করছেন।
ইব্রাহিমের মত স্থানীয় সেবাদানকারীরা কৃষকদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। নিজেদের লোকালয়ে একটি ‘কালেকশন পয়েন্ট’ নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন তারা নিজেরাই ঘটাতে পারে। কালেকশন পয়েন্ট হলো এমন এক স্থান যেখানে উৎপাদক এবং ক্রেতা উভয়ই মিলিত হয়ে পণ্য সংগ্রহ, বাছাই এবং লেনদেন সম্পন্ন করে। এখানে বাজার মূল্য এবং বাজার সম্পর্কিত আরও বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকেরা জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান ও প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থানীয় সেবাপ্রদানকারীরা এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
কালেকশন পয়েন্ট জীবিকা প্রজেক্টের উদ্ভাবনমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে সবচেয়ে নতুন যা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চালু আছে এবং খুব দ্রুতই এটি ইব্রাহিমের বাড়ি ধনকান্দি গ্রামেও চালু হবে।