এবার স্বাধীনতা দিবসে লড়াই চলুক ঘরে বসে
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে, আছি বাংলাদেশের পাশে
মেলাঘরেও কি এখন বৃষ্টি হচ্ছে? বেড়ার ঘরের ফোকর দিয়ে, তাঁবুর নিচ দিয়ে পানি ঢুকে মেঝে ভিজিয়ে দিচ্ছে? পরশুদিন কাজী আর আলমের মুখে মেলাঘরের অনেক গল্প শুনেছি। ওরা প্রথম বর্ডার ক্রস করে এপ্রিলের মাঝামাঝি। মেলাঘরে সেক্টর টু’র হেডকোয়ার্টার হয়েছে জুনের প্রথম দিকে। তার আগে ওরা ছিল মতিনগরে। প্রথমদিকে ওদের অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। প্রায় কিছুই ছিল না। একেবারে শুরুতে গিয়ে উন্মুক্ত আকাশের নিচে ঘাসের ওপর শুয়েছে কতদিন। গায়ের ওপর দিয়ে কেঁচো, বিছে, কত কি চলে গেছে। তারপর তাঁবু যোগাড় হয়েছে তার মধ্যে স্রেফ চাটাই পেতে। ভাত খেয়েছে মাটির সানকিতে, গ্রেনেডের খালি বাক্স আড়াআড়ি কেটে তার মধ্যে। ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার পান্ডে যখন ওদের ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন, তখন সানকি আর গ্রেনেডের বাক্স দেখে, ওদেরকে বাসন-প্লেট দেবার হুকুম দেন। ছেলেরা বলে, ‘আমরা বাসন-প্লেট চাই না, তার বদলে আমাদের বুলেট দিতে বলুন।’ কী ধাতুতে গড়া এই ছেলেগুলো, বাসনের বদলে বুলেট চায়! জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটির ছোট্ট এই অংশ যেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ় মনোবল, দেশের প্রতি তাদের প্রত্যয়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
পথ দেখায় একাত্তর
একাত্তরের ২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতের বর্বরোচিত হামলায় বাংলার মানুষ কিন্তু পিছিয়ে যায়নি, বরং একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছিল দুর্বার প্রতিরোধ। একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন, আদর্শ আর মূল্যবোধ দেশের সাধারণ মানুষকে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র ধরতে শিখিয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বল ইতিহাস আমাদের বারবার পথের দিশা ঠিক করে নিতে সাহায্য করে।
বিপদ মোকাবিলায় চাই মনের জোর
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। সারাক্ষণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রচারমাধ্যমে/ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনা সংক্রমণের তথ্য, সংবাদ ও ভিডিও দেখছি। আপনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না ভয়-আতঙ্ক আপনার মনের ওপর ফেলছে বাড়তি চাপ। এসময় বাড়িতে থেকে বই পড়া, ঘরসজ্জার মতো শখের কাজ হয়তো আপনার মনে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ছোটোদের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটালে নিজের সাথে সাথে বাড়ির অন্যদের মুখেও ফোটাতে পারেন হাসি। অতীতে হয়তো নানারকম বিপদআপদ আপনি নিজেই দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। এবারও পারবেন। যেকোনো বিপদ মোকাবিলায় চাই ধৈর্য, সাহস আর মনোবল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে মনের চাপ কমিয়ে আনতে দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
https://www.who.int/docs/default-source/coronaviruse/coping-with-stress.pdf?sfvrsn=9845bc3a_8
একসাথে পথচলা
সদ্যস্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশে সবহারানো অসহায় মানুষদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজের মাধ্যমে ব্র্যাকের পথচলা শুরু। সেদিন স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয়ের প্রেরণার পাশাপাশি মানুষের মনে ছিল ঐক্যের শক্তি, যা আজও অটুট আছে। এই দুর্যোগে ইতিমধ্যে ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবার্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলার বার্তাসহ ১২ লাখের ওপর লিফলেট এবং ৫ লাখের ওপর স্টিকার বাড়িতে বাড়িতে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সাড়ে ৭ হাজারের বেশি প্যাকেট তরল সাবান, স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ করা হয়েছে। ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক ও গ্লাভসের মতো প্রায় ১৮ হাজার সুরক্ষা পরিধেয় বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ব্র্যাকের সাড়ে ৮ হাজার কর্মীকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলোর সহযোগিতায় শহরের বিভিন্ন বস্তি এলাকা এবং জনসমাগমস্থলে হাত ধোয়ার সুবিধা ও গণপরিবহনে জীবাণুনাশক প্রয়োগের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ব্র্যাক দুই লাখের বেশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক উৎপাদনে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি সুরক্ষা পোশাক তৈরির বিষয়টিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।
করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের মানুষের জন্যই নতুন ও কঠিন একটি অভিজ্ঞতা। তবে আমরা যদি সঠিক তথ্য ও করণীয় সম্পর্কে জানি (ঘরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, বারবার হাত ধোয়া ইত্যাদি) এবং যথাযথভাবে তা পালন করি তাহলে নিশ্চয় সুদিন শীঘ্রই আসবে।