রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা

June 20, 2021

২০২০ সালের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯ সচেতনতায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০টি মাস্ক, ৮৭, ৭৮৮ লিফলেট, ৫৩৫৬টি স্টিকার ১২, ২৯৪ টি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮টি সাবান ও ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৮ টি হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে। আর এসব কাজে নিয়োজিত আছেন ব্র্যাকের ৬ হাজার ৬শ স্বেচ্ছাসেবক। যারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জরুরি সহায়তা দিয়েছে।

২০শে জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়টি বিবেচনায় আনলে দিনটির আলাদা একটি একটি গুরুত্ব বহন করে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর করণীয় দিকটিও জড়িত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হিসেবে মানবিকবোধ থেকে  সরকারের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু সুরক্ষা, ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন (ওয়াশ) এর মতো বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি।

গত বছর থেকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বোচ্চ  গুরুত্ব দিয়ে ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির (এইচসিএমপি) পরিচালনায় এই পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫৫ জন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা হয়েছে।

২০২০ সালের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯ সচেতনতায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০টি মাস্ক, ৮৭, ৭৮৮ লিফলেট, ৫৩৫৬টি স্টিকার ১২, ২৯৪ টি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮টি সাবান ও ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৮ টি হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে। আর এসব কাজে নিয়োজিত আছেন ব্র্যাকের ৬ হাজার ৬শ স্বেচ্ছাসেবক। যারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জরুরি সহায়তা দিয়েছে।

এইচসিএমপি-র আওতায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচির মাধ্যমে ব্র্যাক ইতিমধ্যে  ৯৬,৫০০ জন মায়েদের প্রসবকালীন যত্ন ও সেবা, ১১,৯৫০ জন মায়েদের প্রসবোত্তর যত্ন ও পরিসেবা, ৭১,৯০০ জন নারীদের পরিবারের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা, ৭৭,৩০০ শিশু ও নারীদেরকে টিকা প্রদান এবং ২,৪০০ জন মায়েদের নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ওয়াশসহ অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় ব্র্যাক কর্মীদের তত্ত্বাবধানে  ৬ হাজার ৬শ স্বেচ্ছাসেবী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সংকটের শুরু থেকেই ব্র্যাকের ওয়াশ কমসূচি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে জরুরি ও প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করে। এইচসিএমপি কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়সহ মোট ৭০ হাজার জনগোষ্ঠীকে সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশনে সহায়তা দিয়েছে।

প্রতিদিন ১৮,৫০, ০০০ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ৪০টি পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে। নেটওয়ার্ক যাতে সফলভাবে পরিচালনা করা যায়, এজন্য বড়ো পরিসরে ১,৮০০ মিটার দীর্ঘ স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়। গত বছরের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে ২৭ হাজার ২১৭টি হ্যান্ড ওয়াশিং স্থাপন করা হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত আছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের আওতায় উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ২০১৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৬৯৭৮ অতিদরিদ্র পরিবারকে দুই বছর মেয়াদি গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নারী ও শিশু সুরক্ষার বিষয়টিও ব্র্যাক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছে।  ২০১৭ সালে থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ায় এই নিয়ে মোট ১১ টি কমিউনিটি ভিত্তিক সুরক্ষা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। রেডিওতে বার্তার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধে জনসচেতনতা তৈরি, অডিও ভিজুওয়াল ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪৯৮ জনকে এই সেবা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৪৫ হাজার ১৩৩ জনকে তথ্য সেবা দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই বিগত তিন বছর ধরে ব্র্যাক সরকারের নেতৃত্বে ও অন্যান্য দাতা সংস্থাদের সহযোগিতায় ও সমন্বিত প্রক্রিয়ায় শরণার্থী শিবিরের আশ্রয়গুলোতে নিরলসভাবে কাজ করছে। নিরবিচ্ছিন্ন এই সেবা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments