বাংলাদেশের ৬১টি জেলার ৪১ লক্ষ মানুষ ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির কাছ থেকে নানাভাবে সহায়তা লাভ করছে। কেউ আইনি শিক্ষা নিয়ে নিজে সচেতন হয়ে উঠছে। কেউ ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য কর্মসূচির সেবা নিচ্ছে। জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে এই কর্মসূচির ভূমি পরিমাপ সেবা এখন বেশ জনপ্রিয়।
সাইফুল ইসলাম পেশায় দিনমজুর। রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার হাসনাপাড়া চোরখোরে তার বাড়ি। মূলত হয়রানি করতেই তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে ৭০টি মামলা। অসহায় ও দরিদ্র সাইফুলের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি।
৯ শতক জমি ক্রয় এবং হয়রানির শুরু
সাইফুল ও তার পরিবারের হয়রানির মূলে রয়েছে মাত্র ৯ শতক জমি। কিছু নিজের সঞ্চয় এবং ধারকর্য করে এক লক্ষ টাকায় এই জমি কিনেছিল সাইফুল। সেখানে টিনের ঘর তুলে তিনি বসবাস শুরু করেন। সেখান থেকেই ঘটনার শুরু। সাইফুলের প্রতিবেশী দুই ভাই শফিকুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামের নজর ছিল এই জমির প্রতি। তারা কমমূল্যে জমিটুকু কিনে নিতে চেয়েছিল। জমির মালিক সাইফুলের কাছে জমি বিক্রি করে দেওয়ায় তাদের সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। তাই দুই ভাই এবার দরিদ্র সাইফুলকে ভিটেছাড়া করে সেই জমি নেবার জন্য উঠেপড়ে লাগে। সাইফুলের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করছে।
মামলা হয়েছে ৭০টি
২০১৭ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি তানোর থানায় মামলা করেন শফিকুল ইসলাম। মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে খেতের ফসল নষ্ট করা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়।
এর এক মাসের মাথায় দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা করেন শফিকুল। এতে সাইফুল, তাঁর স্ত্রীসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়। এরপর আরও দুটো মামলা করেন তিনি। এর মধ্যে একটি মামলা হচ্ছে জমি থেকে উচ্ছেদের।
নামে-বেনামে অন্যদের দিয়ে সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হচ্ছে। এইসব মামলার কারণে তাকে ঘুরতে হচ্ছে আদালত থেকে আদালতে। মামলায় কেবল সাইফুল যে ভুক্তভোগী তা নয়, মামলার আসামি করা হচ্ছে তার পরিবার, আত্মীয়পরিজন, প্রতিবেশীদেরকেও। সব মিলিয়ে ৭০টি মামলায় আসামি হয়েছেন ২৬ জন। দুশ্চিন্তা, হয়রানি, অঘটন তো রয়েছেই, পাশাপাশি টাকাপয়সাও খরচ হচ্ছে অনেক। এখানে উল্লেখ্য যে, একই সঙ্গে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার খবর শুনে সাইফুল ইসলামের বড়ো ভাই তইফুর রহমান ওরফে টুটুল গত ১৫ই মে ২০১৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
ন্যায়ের পক্ষে মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি
বাংলাদেশের ৬১টি জেলার ৪১ লক্ষ মানুষ ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির কাছ থেকে নানাভাবে সহায়তা লাভ করছে। কেউ আইনি শিক্ষা নিয়ে নিজে সচেতন হয়ে উঠছে। কেউ ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য কর্মসূচির সেবা নিচ্ছে। জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে এই কর্মসূচির ভূমি পরিমাপ সেবা এখন বেশ জনপ্রিয়। জনগণকে তারা প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শও দিয়ে থাকে। আবার কখনও ন্যায্য অধিকার আদায়ে এই কর্মসূচি অসহায় দরিদ্র মানুষকে দিচ্ছে বিনামূল্যে আইনি সেবা। ঠিক যেমনটা সাইফুলের ক্ষেত্রে হয়েছে।
দৈনিক প্রথম আলোতে ‘৯ শতক জমির জন্য ১২ জেলায় ৭০ মামলা দিনমজুরের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্র্যাকের মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির কর্মকর্তারা তানোরের গিয়ে সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রকৃত ঘটনা শোনার পর ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি সাইফুলের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো পরিচালনায় আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
*ফটো ক্রেডিট- প্রথম আলো