প্রার্থনা এবং প্রকৃতির সহচার্য আমাদের মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত নিজের মতো প্রার্থনা করা, মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করা এবং শখের বাগানে বা ছাদে হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটালে আমাদের মন শান্ত হয়। সেই সঙ্গে নিজে ভালো থাকার পাশাপাশি আশেপাশের সকলের ভালো থাকার বিষয়েও সচেতন হতে হবে।
আমরা বলি, মানসিক প্রশান্তিই কর্মক্ষেত্রের প্রাণশক্তি।
১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘সকলের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা’। শারীরিক সুস্থতা এবং সচেতনতার পাশাপাশি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, “মানসিক প্রশান্তিই কর্মক্ষেত্রের প্রানশক্তি”।
দীর্ঘ সময় ধরে আমরা কমবেশি মানসিক চাপের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক মহামারিতে আজ জনজীবন বিপন্ন। করোনাভাইরাস মহামারির কবলে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি, তেমনই গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এই চাপ মোকাবিলার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ছিলেন কিংবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার আশংকায় ছিলেন এমন প্রায় ১৫০০ ব্র্যাককর্মীকে মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান করেছে ব্র্যাক মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট (এম এইচ পি এস এস) টিম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা ব্যায়াম করুন, পুষ্টিকর খাবার খান, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন। এই সময়ে মনকে ভালো রাখতে যেকোনো রুচিশীল এবং সুস্থ বিনোদন চমৎকার ভুমিকা রাখতে পারে- তাই পছন্দের গান শোনা, ছবি আঁকা, সেলাই করা, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের সৃজনশীল জগতে বিচরণ করতে পারেন, নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন।
প্রার্থনা এবং প্রকৃতির সহচার্য আমাদের মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত নিজের মতো প্রার্থনা করা, মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করা এবং শখের বাগানে বা ছাদে হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটালে আমাদের মন শান্ত হয়। সেই সঙ্গে নিজে ভালো থাকার পাশাপাশি আশেপাশের সকলের ভালো থাকার বিষয়েও সচেতন হতে হবে। নিজের মানসিক চাপের কারণে অন্যদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন কাজ থেকে আমরা সচেতনভাবে বিরত থাকার চেষ্টা করব। ধৈর্য্যের সঙ্গে যেকোনো বিষয় প্রথমে বিচার-বিশ্লেষণ করে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব।
নিজের এবং অন্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বা হাটবাজারে যাওয়া, মানুষের ভিড় আছে এমন কোথাও যাওয়া, ইচ্ছেমতো যেকোনো কিছু স্পর্শ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো যে এখন বিপদের কারণ হতে পারে- সেটি নিজেকে বোঝাতে হবে।
কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিকে ও তার পরিবারকে একটি অসহ্য মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। তাই পরিচিতদের মধ্যে এমন কেউ থাকলে তাদের সাধ্যমতো সহায়তা এবং সহমর্মী আচরণ করুন করুন, সহানুভূতি জানান।
মহামারির এই সময়েও আমাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসতেই পারে যখন আমাদের একার পক্ষে সেই পরিস্থিতি সামলে নেওয়া কঠিন মনে হতে পারে। তখন সুযোগ থাকলে ঘনিষ্ঠ বা আপন মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। অন্য কারও সঙ্গে কথা বলে, অনুভূতি ভাগ করে নিয়ে খুব সহজেই নিজের মনকে আপনি ভালো রাখতে পারেন।
তেমনি দুঃসময়ে কারও কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে আপনি ভালো করে দিতে পারেন তার মন। কীভাবে?
মন খোলা রেখে আর আগে থেকেই কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে, আমরা একজন মানুষের কথা শুনে তাকে মানসিকভাবে কিছুটা সাহস জোগাতে পারি, চাপমুক্ত করতে পারি।
কাছের মানুষের সঙ্গে মনের চাপ ভাগাভাগি সম্ভব না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং মনোবিজ্ঞানীদের শরনাপন্ন নেওয়া যেতে পারে। এজন্য ব্র্যাকের মনোসামাজিক কাউন্সেলিং ইউনিট [হেল্পলাইন ০১৭১৪১২১০০০ ও ০১৭০৪১২১১১১] প্রতিনিয়ত ব্র্যাকের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
এছাড়াও দেশের সর্বস্তরের মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে ‘মনের যত্ন মোবাইলে’ [হেল্পলাইন ০৯৬৬৬৭৮৯৯৯৯] প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীরা মনযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনবেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
এভাবে, আমরা সকলে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারি। স্বাভাবিক এক জীবনে ফিরে যাবার চেষ্টা করতে পারি যেখানে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার ঘটবে সঠিক সমন্বয়।
শামীমা সুলতানা ব্র্যাকের মানবসম্পদ বিভাগে সিনিয়র সাইকোলোজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।
সম্পাদনা – তানজীম রহমান