যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই আমরা শক্তি আর উদ্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাই। মানুষের পরিবর্তিত প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আমরা সবসময় সামনে এগোতে চাই।
কীভাবে আমরা পৃথিবীর শীর্ষ উন্নয়ন সংস্থা হয়ে উঠলাম?
এর সবচাইতে বড় কারণ, মানুষের প্রয়োজনে আমরা সবসময় তাদের পাশে থাকতে পেরেছি। তাদের প্রত্যাশা আর প্রয়োজনের মতো করে প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে আমরা বদলে নিতে পেরেছি। প্রতিদিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বারবার আমরা নিজেদের নতুন করে গড়েছি।
অভিজ্ঞতা আর দৃঢ় অঙ্গীকার আমাদেরকে সাহসী হতে শিখিয়েছে। নতুন নতুন ঝুঁকি নিতে প্রেরণা জুগিয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের ভেতর রয়েছে অদম্য উদ্যোগী মনোভাব, উদ্ভাবনের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সেই শক্তি আমরা ছড়িয়ে দিতে পেরেছি যাঁদের জন্য আমরা কর্মসূচি পরিচালনা করি, তাঁদের মধ্যে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষের মধ্যে বাস করে একজন উদ্যোক্তা। আমাদের অভিজ্ঞতা আর সহায়তা দিয়ে আমরা মানুষের সেই সুপ্ত সম্ভাবনাকেই প্রতিদিন জাগিয়ে তুলছি। মানুষের সম্ভাবনা বিকাশের মাধ্যমেই আসে দারিদ্র্য ও বৈষম্য থেকে মুক্তি। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মূল চালক সে নিজেই। আমরা থাকি সহায়কের ভূমিকায়।
যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই আমরা শক্তি আর উদ্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাই। মানুষের পরিবর্তিত প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আমরা সবসময় সামনে এগোতে চাই। এজন্য কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করি আমরা। নতুন ধরনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নতুন নতুন কর্মসূচির সূচনা করি। সময়ের উপযোগী করে নিজেদেরকে প্রস্তুত করে তুলি।
আমরা জানি, সময়ের সঙ্গেসঙ্গে মানুষের চাহিদাগুলোও বদলে যায়। দেশের অগ্রগতির সুফল হিসেবে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যার যার অবস্থান থেকে আর্থিক উন্নতির পথে এগিয়েছে। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গেসঙ্গে তাঁদের প্রত্যাশাগুলোরও পরিবর্তন হয়েছে। তাঁরা এখন মৌলিক সেবার বদলে উন্নততর সেবার প্রত্যাশা করেন। তাই, চলমান কর্মসূচিগুলোকে পর্যালোচনা করে আমরা নতুন আঙ্গিকে সেবা প্রদানের ধরন সংযুক্ত করেছি। আমাদের কর্মসূচিগুলোতে সেবা দেওয়ার ধরনে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি পরিবর্তন এসেছে অর্থায়নের ক্ষেত্রেও। এর ফলে, মানুষেরা যেমন তাদের চাহিদা এবং প্রত্যাশার মতো করে সেবা পাচ্ছেন, তেমনি আমরাও স্বনির্ভর হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
সময়ের প্রয়োজনেই আমাদেরকে হয়ে উঠতে হচ্ছে আরও দ্রুত, দক্ষ, নির্ভুল এবং ব্যয়সাশ্রয়ী। একুশ শতকের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আমরা প্রযুক্তিগত সমাধান বাস্তবায়নের ওপর যেমন জোর দিচ্ছি, তেমনি গুরুত্ব দিচ্ছি কর্মীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানোর উপর। এর ফলে আরও বেশি মানুষের কাছে আমরা প্রতিযোগিতামূলক এবং সাশ্রয়ীভাবে, দ্রুততর সময়ে, উন্নতমানের সেবা পৌঁছে দিতে পারছি। প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, কর্মীনিয়োগ, ব্যবস্থাপনা-এসব প্রক্রিয়া এখন আরও আধুনিক হয়ে উঠেছে। সকল মানুষই যেন তাঁর উদ্ভাবনী সামর্থ্যরে বিকাশ ঘটাতে পারেন, তার জন্য উদ্ভাবন-সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে পেরেছি আমরা।
নতুন সময়ে, নতুনভাবে এগিয়ে চলার এই যাত্রায় ব্র্যাকের কর্মীরা সবসময়ই সাহসী আর উদ্যমী ভূমিকা রেখেছে।
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন আমাদেরকে প্রাসঙ্গিক রাখতে সাহায্য করবে। যেখানেই প্রয়োজন, সেখানেই উদ্ভাবনী শক্তি আর উদ্যম নিয়ে মানুষের পাশে থাকব আমরা।
উদ্ভাবনই হোক সমাধান, উদ্ভাবনই হোক নতুন প্রেরণা।
ডা. মুহাম্মাদ মুসা
নির্বাহী পরিচালক, ব্র্যাক