করোনার যুগে কি স্কুল শিক্ষার্থীরা হতে পারে পরিবর্তনের প্রতিনিধি?

January 13, 2022

দেশে করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কম ছিল কিছুদিন আগে, তাই দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার ক্ষেত্রে খানিক শিথিলতা দেখা যায়। মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার চর্চা ধীরে ধীরে কমছে। এমনকি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে একটি বিশেষ প্রচারণার অধীনে যারা টিকা গ্রহণ করেছিল, তাদের মধ্যে প্রায় ১৭% দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেননি।

“আমার বাড়িতে শুধু আমি আর আমার মা। আমাদের দুজনকেই ঘরের বাইরে যেতে হয়, তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করি মাস্ক পরতে, ভিড় এড়িয়ে থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে।”-কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ ফয়সালের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার নিয়মগুলো সম্পর্কে সে জানে এবং মেনে চলার চেষ্টাও করছে।

কয়েক মাস আগেও প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল করোনাভাইরাস। কঠোর লকডাউন এবং টিকা প্রদান কর্মসূচির মতো সরকারের কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ায় ফলে করোনায় মৃতের সংখ্যা খানিক কমলেও বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ধরন ‘অমিক্রন দেখা দেওয়াতে আবার মহামারির ঝুঁকি বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০২২ পর্যন্ত এই মহামারির প্রকোপ থাকতে পারে।

দেশে করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কম ছিল কিছুদিন আগে, তাই দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার ক্ষেত্রে খানিক শিথিলতা দেখা যায়। মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার চর্চা ধীরে ধীরে কমছে। এমনকি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে একটি বিশেষ প্রচারণার অধীনে যারা টিকা গ্রহণ করেছিল, তাদের মধ্যে প্রায় ১৭% দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেননি।

এমন একটি সময়ে কি শিশুরা আমাদের নিরাপত্তার পথ দেখাতে পারে?

আগের মতোই আমাদের এখনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী, যে শিশুরা স্কুলে পড়ালেখা করছে তাদের প্রতি অভিভাবকদের আস্থা বেশি থাকে। আরও দেখা গেছে যে, সন্তান শিক্ষিত হলে অভিভাবকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে আসে।

বিশ্বের নানা দেশে শিক্ষার্থীরা তাদের কমিউনিটির সদস্যদের স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য এগিয়ে এসেছে। যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকার লেসোথোতে শিক্ষার্থীরা পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে তাদের এলাকায় সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেনিয়ায় পরিচালিত এক গবেষণা অনুযায়ী, সারাদেশে যত পরিবার আছে, তাদের ৭১ শতাংশ জানিয়েছে যে তারা এখন হাত ধোয়ার বেসিন বেশি ব্যবহার করে কারণ এ বিষয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে কথা বলেছে। এছাড়াও, উগান্ডায় স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির সফল প্রচারে স্কুল এবং প্রতিবেশী কমিউনিটিতে অবদান রেখেছে।

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাও এর থেকে দূরে নয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজের পরিবারে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের মাঝে। ব্র্যাক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির অধীনে “কমিউনিটি সাপোর্ট টিম কক্সবাজার (সিএসটি কক্সবাজার)” প্রকল্পের মাধ্যমে ব্র্যাক কক্সবাজারে স্কুল শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন করছে ও করোনা বিষয়ক সচেতনামূলক কার্যক্রমে তাদেরকে উৎসাহিত করছে। কক্সবাজারে ১৫০টি স্কুলে সচেতনতামূলক প্রচারণা চলছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের করোনা প্রতিরোধের স্বাস্থ্যবিধি এবং টিকার গুরুত্ব নিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রাসঙ্গিক কমিকস্ এবং তথ্যপূর্ণ লিফলেট, ও বিভিন্ন জ্ঞান ভিত্তিক কুইজে অংশগ্রহণ করছে তারা। জ্ঞান, প্রাসঙ্গিক সামাজিক ও ব্যবহার পরিবর্তন তথ্য উপকরণ, এবং একটি নতুন দায়িত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিবার ও সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চলেছে। স্কুল শিক্ষার্থীদের ভূমিকা আগের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এখন যেহেতু সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের জন্য করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে।

ব্র্যাকের স্বেচ্ছাসেবক প্রাংগন পল প্রান্ত জানিয়েছেন, সাধারণভাবে শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় স্বাস্থ্যবার্তা এগিয়ে নিতে বেশি আগ্রহ দেখায়। এই পদ্ধতিটি সমাজে গুজব বা ভুল তথ্য ছড়িয়ে না দেওয়া এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা যায় তা কাটিয়ে ওঠার একটি কার্যকর এবং নতুন উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

 

সম্পাদনা- তাজনীন সুলতানা

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments