দীর্ঘদিন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার বিষয়টি মানুষের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে, শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। গল্প করা, কথা বলার মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা যেতে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক অনিরাপত্তা আমাদের অনেকের মনের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে। নিজের মন খারাপের কষ্টগুলো ছড়িয়ে পড়ে পরিবারের অন্যদের মাঝেও। দিনের পর দিন এসব চলতে থাকায় কেউ মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন, কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, কেউ বিষণ্নতা-হতাশায় ভুগছেন, কারও আবার আচরণে পরিবর্তন আসছে।
সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে যা করতে পারি
১. সারাদিন কীভাবে কাটাবেন তার একটি রুটিন তৈরি করুন। সুষম খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, নিয়মিত শরীরচর্চা ইত্যাদি সুঅভ্যাস মনের চাপ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে মনে রাখবেন, মহামারির এই সময়টিতে পর্যাপ্ত ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমান। এটি মন ও শরীর দুই-ই ভালো রাখবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিজে চর্চা করুন এবং পরিবারের অন্যদের তা মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।
২. এসময় বাড়ির বয়স্ক মানুষটি হঠাৎ হয়ে উঠতে পারেন শিশুর মতো অবুঝ, শিশুদের মধ্যে খিটখিটে বা অস্থিরতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। কোনো রকম বিপদে তারাই সবচেয়ে বিপদাপন্ন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তাদের সামলানোর জন্য রাগ বা ঝগড়া নয়। আপনজনদের বুঝতে চেষ্টা করুন, তাদের কথা শুনুন, তাদের মনের যত্ন নিন।
৩. কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর এবং একইসঙ্গে কষ্টকর ব্যবস্থাপনাটি হলো শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। দীর্ঘদিন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার বিষয়টি মানুষের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে, শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। গল্প করা, কথা বলার মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা যেতে পারে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে টেলিফোন, ভিডিও কল দিন, যোগাযোগ রাখুন। সবার সাথে মন খুলে কথা বলুন।
৪. নারীরা সাধারণত পরিবারে প্রাথমিক এবং কখনও কখনও একমাত্র সেবাদানকারীর ভূমিকা পালন করেন। সে কারণে যেকোনো সংকটে নারীর কাজের চাপ এবং মানসিক চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়। সংসারের কাজ সকলে মিলেমিশে করলে এই চাপ অনেকাংশেই কমানো যায়। নারীর প্রয়োজনগুলোতে অগ্রাধিকার দিয়ে সহযোগিতা করুন।
৫. বাগান করলে, পোষা পশুপাখির যত্ন করলে, বই পড়লে মন ভালো থাকে। এছাড়াও বাড়ির সবাইকে নিয়ে গল্প করুন কিংবা ছবি আঁকুন, সিনেমা দেখুন, রান্না করুন- তাতেও কমবে মানসিক চাপ। মন ভালো রাখতে পছন্দের কাজটিকে বেছে নিন।
৬. যেকোনো সৃজনশীল এবং ভালো কাজে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যকে সাহায্য করাও একটি ভালো কাজ। যারা বিপদে আছে তাদের উপকার করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করুন। অন্যের ভালোতে নিজের খুশি, বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত।
মনের যত্ন মোবাইলে
অনিশ্চয়তায় ঘেরা এই সময়ে মন ভালো রাখার বিকল্প নেই। আপনার যেকোনো চিন্তা বা মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাইলে ‘মনের যত্ন মোবাইলে’-এর হটলাইন নম্বর ০১৭০৯৮১৭১৭৯-তে ফোন দিন। সপ্তাহের ৭দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীরা সহানুভূতির সঙ্গে আপনার কথা শুনতে ও পরামর্শ দিতে প্রস্তুত।
মনের শক্তি বড়ো শক্তি। করোনা মহামারিরকালে মানসিকভাবে নিজেকে উজ্জীবিত রাখুন। নিজে ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে কীভাবে ভালো থাকা যায় তার চেষ্টা আপনিই শুরু করুন।
‘মনের যত্ন মোবাইলে’ সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন