“..আমরা বাড়ির যে জায়গাগুলো নিয়মিত হাত দিয়ে স্পর্শ করি (দরজার হাতল, বাথরুমের হাতল, দরজার শিকল ইত্যাদি) ঐ জায়গাগুলো থেকে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি, তাই সেসব জায়গা জীবাণুমুক্ত রাখতে বেশি খেয়াল করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে টিভি খবরের নিয়মিত আপডেট নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করি সবসময়।”
সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার ইটাগাছা গ্রামের পল্লীসমাজের ক্যাশিয়ার খাদিজা খাতুন । তিনি মনে করেন, সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির পল্লীসমাজের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি অনেক বিষয়ে আগের চাইতে বেশি সচেতন হয়েছেন। সবাই মিলে একসাথে ভালো থাকার ইচ্ছে এবং চেষ্টা দুটোই বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।
মানুষের জীবনে সমস্যা তো থাকবেই। সব সমস্যার সমাধান তো একা করা যায় না, সবাই মিলে করলে ভালো হয়। এলাকায় দরিদ্র অসহায় মানুষের চিকিৎসা সহযোগিতা থেকে শুরু করে অসচ্ছল পরিবারের মেয়ের বিয়েতে সহযোগিতা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা, পারিবারিক ঝগড়া মীমাংসা করা, নানাবিধ সামাজিক ও মানবিক কাজে তাই তিনি সবসময় থেকেছেন সবার আগে।
বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের আঘাতে দিশেহারা তখন ঘরে বসে চিন্তা করেছেন, এই মরণব্যাধির হাত থেকে বাঁচতে পল্লীসমাজ সদস্যদের জন্য কী করা যেতে পারে। তারাও তো খাদিজা খাতুনের আপনজন।
“মার্চ মাসের শুরুতে আমার এলাকার প্রায় ২০০ বাড়িতে গিয়ে করোনা সচেতনতা লিফলেট বিলি করেছি এবং হাত ধোয়ার নিয়ম ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি ভালো করে বুঝিয়ে বলেছিলাম। এপ্রিল মাসে টিভির একটি টকশোতে দেখলাম, আমরা বাড়ির যে জায়গাগুলো নিয়মিত হাত দিয়ে স্পর্শ করি (দরজার হাতল, বাথরুমের হাতল, দরজার শিকল ইত্যাদি) ঐ জায়গাগুলো হতে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি, তাই সেসব জায়গা জীবাণুমুক্ত রাখতে বেশি খেয়াল করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে টিভি খবরের নিয়মিত আপডেট নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করি সবসময়।
জীবাণু কোথায় আছে তা কেউ বলতে পারে না। অদৃশ্য এই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় হলো -মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আমি ঠিক করলাম, আমার পল্লীসমাজের প্রত্যকটি বাড়ির যে জায়গাগুলোতে নিয়মিত হাতের স্পর্শ লাগে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নেব। এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যকেও উদ্যোগ সর্ম্পকে জানালাম, তিনিও আমার পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন।
বাজার থেকে বোতল স্প্রে ও ব্লিচিং পাউডার কিনে আনলাম। পানির সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে জীবাণুনাশক তরল তৈরি করলাম। নিজের বাড়িসহ আশেপাশে ২০০ বাড়িতে গিয়ে স্প্রে করলাম এবং পাশাপাশি তা তৈরির প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীতা সম্পর্কে পল্লীসমাজের সদস্যদের বুঝিয়ে বললাম।
এরপর থেকে প্রতিবেশীদের অনেকেই নিয়মিত বাড়িতে জীবাণুনাশক তরল স্প্রে করছেন। আমি মনে করি আমার এই ক্ষুদ্র উদ্যোগটুকু করোনা প্রতিরোধে কাজ করবে এবং আমাদের এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। পল্লীসমাজের ক্যাশিয়ার হিসেবে এই করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে বিশেষ করে নারীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি আনন্দিত। এভাবেই এই জাতীয় মহাসংকটে যার যার অবস্থান থেকে মানুষের কাছাকাছি থেকে ছোটো ছোটো উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে আমরাই পারি যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে।”
লেখক ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচিতে সাতক্ষীরায় কর্মরত আছেন।
সম্পাদনা- সুহৃদ স্বাগত, তাজনীন সুলতানা
Nice & effective initiatives,thanks Pollishomaj leaders doing a great job.
Thanks to our PS Leaders