প্রিয় সহকর্মী, সহযোগী ও বন্ধুগণ
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, আমাদের প্রিয় আবেদভাইয়ের ৮৪ বছর পূর্ণ হলো গত ২৭ এপ্রিল। ব্যক্তি আবেদ ভাইকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি চিরতরে, কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্ন, আদর্শ, ভাবনাগুলোকে সঞ্চারিত করে গেছেন আমাদেরই মাঝে, যা সর্বদাই আমাদের উজ্জীবিত করে।
আমরা এক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ে পুরো বিশ্ব আজ ঐক্যবদ্ধ, তবে একথাও ঠিক যে, এটি আমাদের সবার জীবনকে এমন বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে যার মুখোমুখি আমরা আগে কখনও হয়নি। প্রান্তিক অবস্থানে থাকা মানুষেরা এর প্রভাবে সবচাইতে খারাপ সময় কাটাচ্ছেন। এরকম কঠিন সময়ে আবেদ ভাইয়ের মতাদর্শকে আমরা স্মরণ করি। আবেদ ভাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে বাক্যটি, যাকে ব্র্যাকের মূলমন্ত্রও বলা চলে, ‘ক্ষুদ্র সুন্দর, কিন্তু বৃহৎ-এর প্রয়োজন আছে’। এই দুর্দিনে বাক্যটি যেন কম্পাসের মতো সঠিক পথের দিশা দেখায়।
একসময় বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল ডায়রিয়া। এদেশের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মায়েদের খাবার স্যালাইন বানানো ও তা সঠিক নিয়মে খাওয়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিলেন আবেদ ভাই। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পরিচালিত এই ক্যাম্পেইনের ফলে ডায়রিয়ার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যু ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনতে আমরা সফল হয়েছিলাম। তার সহমর্মিতা এবং দূরদর্শিতার ফলে শিশুরা আজ সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে উঠছে।
এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের পথেই আমাদের আবার ফিরে যাওয়া উচিত। গত মাসে আমাদের ১ লাখেরও বেশি কর্মী, স্বাস্থ্যসেবিকা এবং স্বেচ্ছাসেবক বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবন রক্ষাকারী স্যানিটেশন পণ্য পৌঁছে দেওয়া এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের শনাক্তকরণে সরকারের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। জনগণের জন্য উদ্ভাবন, মমত্ববোধ ও প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের যে কার্যধারাটি আমরা অনুসরণ করি তা আজও প্রাসঙ্গিক।
আবেদ ভাই আমাদের শিখিয়েছেন, কোনো সমস্যাই দুস্তর, অলঙ্ঘ্য নয়। তিনি তাঁর জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করতেন তা হলো, বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের তার অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পাওয়া উচিত। তিনি ছিলেন বৃহৎ স্বপ্নদ্রষ্টা, তাঁর স্বপ্নগুলো নব নব উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তিবর্গকে যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করে যাবে।
আবেদ ভাই নিজেকে বিশ্ব নাগরিক মনে করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘যাদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তাদের ওপর থেকে কখনই দৃষ্টি ফেরানো যাবে না।’ এক দশক ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত আফগানিস্তান, নেপাল ও হাইতির ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প ও শ্রীলংকার সুনামির পর সেসব দেশের মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে ব্র্যাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা আজও একইভাবে এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছি, যেমনটি আমাদের আবেদ ভাই করতেন- ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতাকে বুঝতে চেষ্টা করা, পরিবর্তিত চাহিদার প্রতি সাড়াদানের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত জ্ঞান অর্জন এবং মানিয়ে নেওয়ার চর্চা করা এবং সবসময় প্রান্তিক অবস্থানে থাকা জনগণের পাশে দাঁড়ানো।
আবেদ ভাইয়ের জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, তিনি যে সাহস, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির সঞ্চার করে গেছেন তাকে উপজীব্য করেই আমরা পথ চলব এবং আরও উন্নত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাব।
আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ব্র্যাক পরিবার
i am Brac. i like the Brac